Logo

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ২,২০০ অভিবাসী গ্রেপ্তার

Icon

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০৯:৩৫

যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ২,২০০ অভিবাসী গ্রেপ্তার

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) একদিনে ২ হাজার ২০০-এর বেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে—যা গত পাঁচ মাসে একক দিনে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তারের রেকর্ড। স্থানীয় সময় মঙ্গলবারের (৪ জুন) এই অভিযানকে ‘সংস্থার ইতিহাসে নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ও আইসিই-এর একজন মুখপাত্র। হোয়াইট হাউসের চাপে দ্রুত ও ব্যাপক গ্রেপ্তার বাড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এনবিসি নিউজকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে শত শত জনই ‘আটকের বিকল্প’ (ATD) প্রোগ্রামের আওতায় ছিলেন। এ প্রোগ্রামের অধীনে যেসব অভিবাসী জনসুরক্ষার জন্য হুমকি নন, তাদের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে গোড়ালির মনিটর, স্মার্টফোন অ্যাপ কিংবা নিয়মিত আইসিই অফিসে রিপোর্ট করার মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়।

তবে এবারের গ্রেপ্তার অভিযানে আইসিই নতুন একটি কৌশল নিয়েছে বলেই অভিবাসন আইনজীবীদের ধারণা। তারা জানাচ্ছেন, এটিডি প্রোগ্রামে থাকা বহু অভিবাসীকে একটি গণবার্তার মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত সময়ের আগেই সাক্ষাতে হাজির হতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে যারা সাক্ষাতে হাজির হয়েছেন, তাদের অনেককে সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার নিউ ইয়র্ক সিটির একটি আইসিই অফিসে এনবিসির একজন প্রতিবেদক এমন সাতজন অভিবাসীকে দেখতে পান, যাদের সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়েছিল এবং পরে হাতকড়াসহ অচিহ্নিত গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন এক কলম্বিয়ান নাগরিক, যাকে গ্রেপ্তারের সময় তার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন এবং শিশু কন্যা বাবার পিছু নেন।

এই ব্যক্তির আইনজীবী মার্গারেট কার্জিওলি বলেন, তিনি সব নিয়ম মেনে চলেছেন, প্রতিটি সাক্ষাতে হাজির হয়েছেন। এমন আচরণ রীতিমতো প্রতারণার মতো।

আইসিই মুখপাত্র দাবি করেছেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আদালতের চূড়ান্ত নির্বাসনের আদেশ ছিল এবং তারা সেটি মানেননি। তবে অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, বহু গ্রেপ্তারকৃতের এমন কোনো আদেশ ছিল না। আইসিই এখনও এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি।

এই গণগ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের নীতিনির্ধারণী উপ-প্রধান স্টিফেন মিলার সম্প্রতি আইসিই নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিদিন ৩,০০০ গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন এবং তা পূরণ না হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার হুমকি দেন।

অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, এই ধরনের অভিযান ভয়, বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে। আমিকা নামে একটি অভিবাসী অধিকারকেন্দ্রের আইনজীবী আতেনাস বুররোলা এস্ত্রাদা বলেন, যাদের শুধু সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়েছে, কিংবা কোর্টে শুনানিতে যাচ্ছেন—তাদের এভাবে গ্রেপ্তার করা একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। এটা প্রমাণ করে, আপনি আইন মেনে চললেও নিরাপদ নন।

আমেরিকান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ডিরেক্টর গ্রেগ চেন বলেন, মানুষ এখন আতঙ্কিত ও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন। আদালতে হাজিরা বা সাক্ষাত দিতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ আইসিই এখন যা করছে, তা নিছক আইন প্রয়োগ নয়—এটা একটি ভীতিকর, নির্বিচার কৌশল।

আইসিই জানিয়েছে, বর্তমানে তারা ২০,০০০-এর বেশি অভিবাসীর ওপর গোড়ালি মনিটর ব্যবহার করছে এবং এদের ৯৮.৫ শতাংশই নিয়মিত সাক্ষাতে হাজির হন। এই উচ্চ হাজিরার হারই এখন তাদের দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে উঠেছে।

প্রাক্তন আইসিই চিফ অব স্টাফ জেসন হাউজার বলেন, যাদের যাচাই-বাছাই করে আইনি নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে, সেই অভিবাসীদের এভাবে আটক করা আমলাতান্ত্রিক এক প্রহসন। এটা সংস্থার নৈতিকতার ওপরই প্রশ্ন তোলে।

কেই/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

যুক্তরাষ্ট্র

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর