বৈরুতে ঈদের ছুটির আগে হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৫, ১৩:১৭
-6843e7a55a90f.jpg)
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহর একটি ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার রাতের এই হামলার সময় ঈদুল আযহার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবের ঠিক আগ মুহূর্ত ছিল, যা লেবাননে নতুন করে আতঙ্ক ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর এমন একটি ইউনিট শনাক্ত করেছে, যেখানে ভূগর্ভে ‘হাজার হাজার’ ড্রোন তৈরি করা হচ্ছিল। ইসরায়েলের ভাষ্য অনুযায়ী, এই কার্যক্রমের পেছনে অর্থায়ন করছে ইরান-সমর্থিত ‘সন্ত্রাসীরা’। খবর- বিবিসি।
হামলার পরপরই বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিহ এলাকায় হিজবুল্লাহর ঘাঁটি সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ভবন খালি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নিরাপত্তা সতর্কতার কারণে হাজারো মানুষ তড়িঘড়ি করে ওই এলাকা ছেড়ে যাওয়ায় যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে, তবে এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি আমাদের মাতৃভূমির স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর পরিকল্পিত হামলা, বিশেষ করে ছুটির সময় ও পর্যটন মৌসুমের ঠিক আগে।’
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এই হামলাকে আন্তর্জাতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জাতিসংঘের লেবানন বিষয়ক বিশেষ সমন্বয়কারী জিনাইন হেনিস বলেছেন, ‘এই হামলা নতুন করে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে এবং উত্তেজনা প্রশমনে কূটনীতির গুরুত্ব আরও বেশি করে সামনে এনেছে।’
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সেনাবাহিনীর 'নিখুঁত হামলার' প্রশংসা করে বলেন, ‘হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিহত করতে না পারার দায় লেবাননের সরকারেরই।’
ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, হিজবুল্লাহর ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে তারা সীমান্ত অঞ্চলে যেভাবে ইসরায়েলে হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে, তা লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই হামলার আগে, ইসরায়েলি বাহিনীর আরবি মুখপাত্র আভিচায় আদরাই সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বৈরুতের দাহিহ এলাকার কিছু ভবনের মানচিত্র প্রকাশ করে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আপনারা হিজবুল্লাহর অবকাঠামোর পাশে অবস্থান করছেন।’
গত ১৩ মাস ধরে ইসরায়েল ও ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে এই সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে। লেবানন কর্তৃপক্ষের দাবি, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বহু বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১২ লাখ মানুষ।
অন্যদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, সংঘাতে তাদের ৮০ জনের বেশি সেনা এবং ৪৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, সীমান্তবর্তী হিজবুল্লাহ স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা এবং বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলি নাগরিকদের ঘরে ফেরানোর লক্ষ্যেই তাদের এই সামরিক পদক্ষেপ।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বরে হিজবুল্লাহকে বাদ দিয়ে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং দক্ষিণ লেবাননের নিরাপত্তা দায়িত্ব নেয় লেবানন সেনাবাহিনী। তবে চুক্তি বলছে, আত্মরক্ষার প্রয়োজন হলে যে কোনো পক্ষ পদক্ষেপ নিতে পারবে।
তবে সাম্প্রতিক হামলার পর লেবাননের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতির কার্যক্রমে সহযোগিতা আংশিকভাবে স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে।
এর আগে এপ্রিল মাসেও দাহিহ এলাকায় হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়। একই মাসে হিজবুল্লাহর একজন কর্মকর্তা ও আরও তিনজন নিহত হন। লেবানন সরকার বলছে, এসব হামলা এবং দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন।
সবশেষ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার পরপরই হিজবুল্লাহ সীমান্তবর্তী ইসরায়েলি অবস্থানে রকেট ছোঁড়ে। এরপর থেকে এই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এমএইচএস