লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন ইস্যুতে স্থানীয় সময় রোববার (৮ জুন) বিকেলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। শহরের মেট্রোপলিটন ডিটেনশন সেন্টারের বাইরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ‘অবৈধ জমায়েত’ ঘোষণা করে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি)। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বহু ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীরা ১০১ ফ্রি‌ওয়ে অবরোধ করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, ফ্ল্যাশ-বাংল ও লাঠিপেটার মতো শক্তিপ্রয়োগ করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে। সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে মহাসড়ক মুক্ত হলেও আশপাশের সড়কে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।

এর আগে বিকেল ৩টার দিকে এলএপিডি আলামেদা এলাকার কারাগারের বাইরে থাকা বিক্ষোভকারীদের ‘অবৈধ জমায়েত’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেয় এবং একই সঙ্গে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। এক্সে (সাবেক টুইটার) এলএপিডি জানায়, আলামেদা এলাকার ২য় স্ট্রিট থেকে আলিসো স্ট্রিট পর্যন্ত এলাকায় অবৈধ জমায়েত ঘোষণা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি একে ‘বিদ্রোহী জনতা’ মোকাবেলার উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেন। ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসকে অভিবাসী হামলা থেকে মুক্ত করতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, প্রতিরক্ষা বিভাগ ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সাংবিধানিক অধিকার আমরা রক্ষা করব, কিন্তু সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।

একই সঙ্গে তিনি রবিবারের অস্থিরতা ‘প্রশাসনের উসকানির ফল’ বলেও মন্তব্য করেন।

এফবিআই-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ড্যান বংগিনো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ফেডারেল অফিসারের ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় ট্রাম্পের কড়া অবস্থানের বিরোধিতা করে ২৩ জন ডেমোক্র্যাট গভর্নর এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় ন্যাশনাল গার্ডের ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পদক্ষেপ ‘উসকানিমূলক ও অপ্রয়োজনীয়’।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমের কার্যালয় এক চিঠিতে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথকে অনুরোধ জানায় যেন সশস্ত্র বাহিনীকে রাজ্য থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

রোববার ক্যাম্প ডেভিডে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এখনো ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করার সময় আসেনি, তবে প্রয়োজনে তিনি সব ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান উত্তেজনা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে বিশ্লেষকদের মত। এতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসন ও নাগরিক অধিকারের ইস্যুতে নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।

কেই/এমএইচএস