-684665ea90c77.jpg)
গাজায় জরুরি ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যাত্রা করা ‘ম্যাডলিন’ নামে একটি ব্রিটিশ পতাকাবাহী ত্রাণবাহী জাহাজ দখল করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে আটক করে জোরপূর্বক জাহাজটিকে ইসরায়েলের আশদাদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাতে থাকা অন্তত ১৩ জন মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও পরিবেশ আন্দোলনকারীকেও আটক করে ইসরায়েলে নেওয়া হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, আল জাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ, ফ্রান্সের এমইপি রিমা হাসান এবং ব্রাজিল, তুরস্ক, ফ্রান্স, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের আরও কয়েকজন কর্মী।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ম্যাডলিন’ নামের এই ছোট আকারের জাহাজটিকে ‘সেলফি ইয়ট’ বলে ব্যঙ্গ করে উপকূলে নিয়ে আসা হয়েছে এবং যাত্রীদের ‘নাটকপ্রিয়তা’র অভিযোগে কটাক্ষ করা হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ মানবিক উদ্যোগ—যার লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, শিশুদের দুধ, ডায়াপার, স্যানিটারি পণ্য ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া।
ইতালির সিসিলির কাতানিয়া বন্দর থেকে গত ১ জুন রওনা হওয়া জাহাজটির সঙ্গে গাজার উপকূলের খুব কাছাকাছি এসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও শুরু হয়। জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা অ্যালবানেজ জানান, জাহাজটির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়েছিল যখন তিনি বলছিলেন, ‘আরেকটি নৌকা কাছে আসছে।’ এরপরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জাহাজে থাকা যাত্রীদের হাত তুলে বসে থাকার একটি ছবি টেলিগ্রামে প্রকাশিত হয়েছে, যেটি আটক মুহূর্তের বলে দাবি করছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)।
মার্কিন অধ্যাপক আদিল হক এই ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর আচরণকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অধিকার সংস্থা সিএআইআর এই ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ বলে অভিহিত করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের নির্দেশে ম্যাডলিনকে আটক করা হয়। জাহাজে থাকা সামান্য পরিমাণ ত্রাণসামগ্রীর ভবিষ্যৎ বিষয়ে ইসরায়েল জানায়, ‘উল্লেখযোগ্য নয়’ এমন এই সহায়তা তারা ‘যথাযথ মানবিক চ্যানেলের মাধ্যমে গাজায় পাঠাবে।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে গাজায় হামাসের শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল উপকূলীয় এই ভূখণ্ডে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে তারা। ফলে ব্যাপক খাদ্য ও ওষুধ সংকটে পড়ে গাজার জনগণ। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, সেখানে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে এবং ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে রয়েছেন।
এ প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিপন্থি আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন গাজাগামী এই ত্রাণ মিশনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু শান্তিপূর্ণ এই সহায়তামূলক অভিযানকেও সামরিকভাবে দমন করেছে ইসরায়েল, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা, এক্স (সাবেক টুইটার)
এমএইচএস