ভারতের গুজরাটের আহমদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে থাকা সবাই নিহত বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিমানটিতে মোট ২৪২ জন ছিলেন। যাদের ২৩২ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু সদস্য। যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও একজন কানাডীয় নাগরিক ছিলেন। 

রয়টার্সের বরাতে হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে ১০০ জনেরও বেশি মরদেহ আনা হয়েছে।

আর বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) আহমদাবাদের পুলিশ কমিশনার জি.এস. মালিক বলেন, ‘বিমানের কেউ বেঁচে নেই বলেই মনে হচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘বিমানটি একটি আবাসিক এলাকার ওপর আছড়ে পড়ে যেখানে অফিস ও বসতবাড়ি ছিল। সুতরাং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও নিহতের ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঠিক কতজন মারা গেছেন, সেই সংখ্যা নির্ধারণের কাজ চলছে।’

বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। কিন্তু মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ওঠার পরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আছড়ে পড়ে।

এখন পর্যন্ত যা যা জানা গেছে

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটের কিছু পরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ফ্লাইট রাডারের তথ্যমতে, উড্ডয়নের ৫৮ সেকেন্ডের মাথায়, ৬২৫ ফুট উচ্চতায় থাকাকালীন সিগনাল হারিয়ে যায়।

বিমানটি আহমদাবাদের বি.জে. মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ক্যান্টিনে আঘাত করে। ওই সময় শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্লেট-গ্লাস, ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে থাকা জিনিসপত্র এবং বিমানের ধ্বংসাবশেষের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

প্রাথমিকভাবে পাঁচ মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরও অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমানটি অস্বাভাবিকভাবে নিচু দিয়ে উড়ছিল এবং উড্ডয়নকালীন ‘লিফট’ নিতে ব্যর্থ হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে এটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। এ সময় বিশাল আগুনের গোলা তৈরি হয়।

বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু বলেন, ‘ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করা হয়েছে।’

বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আহমদাবাদের ট্র্যাজেডি আমাদের স্তম্ভিত ও শোকাহত করেছে। এটা ভাষায় প্রকাশের ঊর্ধ্বে। এই দুঃখের মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ভাবনায় রাখছি। মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লন্ডনগামী একটি বিমানের এভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য হৃদয়বিদারক। ব্রিটিশ নাগরিকরাও এতে ছিলেন। আমি নিয়মিত আপডেট নিচ্ছি। যাত্রী ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’

এদিকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর নিশ্চিত করেছে, বিমানটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা ছিল।

এয়ার ইন্ডিয়া চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন বলেন, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমরা শোকাহত। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো ও জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা। একটি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং হটলাইন চালু করা হয়েছে: 1800 5691 444।’

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা ও এনডিআরএফের টিম মোতায়েন রয়েছে। রাস্তাগুলো বন্ধ করে উদ্ধারকার্যে গতি আনা হয়েছে। দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

ওএফ