ইরানের ওপর ইসরায়েলিদের ‘পূর্ব-নির্ধারিত হামলা’ শুরুর পর তেহরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগাম হামলার পর, তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ইসরায়েলের উচিত ছিল না হামলা চালানো। কারণ, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, যা এই হামলার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ট্রাম্পের ভাষায়, ‘আমি চাই না ইসরায়েল এখনই হামলা চালাক। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনার একটা বাস্তবসম্ভবতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এই সামরিক পদক্ষেপের ফলে সেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।’

জানা গেছে, আগামী রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের পরমাণু আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ইসরায়েলি হামলার জেরে এই বৈঠক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

ইসরায়েলের এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং ইরান যেন এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বা এর স্বার্থকে লক্ষ্য না করে।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) গভীর রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে রুবিও বলেন, ‘আমরা ইরানে চালানো হামলায় জড়িত নই। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলছি—ইরান যেন কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কিংবা মার্কিন নাগরিকদের ওপর হামলা না চালায়।’

ইসরাইলের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের রাজধানী তেহরানে জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় ছিল।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানান, ইরানে প্রতিরোধমূলক হামলার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তার ভাষায়, আমরা ধারণা করছি, ইরান আমাদের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে।

মার্কো রুবিও জানান, ইসরাইল আমাদের নিশ্চিত করেছে, তারা আত্মরক্ষার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িত নয় এবং আমরা সংঘাত এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

এ ঘটনায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম এক লাফে ৬ শতাংশ বেড়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো থেকে কর্মী সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার ভাষায়, এটা বিপজ্জনক এলাকা হতে পারে, তাই আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা জানি মার্কিন ঘাঁটিগুলো কোথায় আছে। দরকার হলে দ্বিধা না করে সেগুলোকে লক্ষ্য করব।

এমএইচএস