Logo

আন্তর্জাতিক

ইরানে কেন এখন হামলা চালাল ইসরায়েল?

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ০৮:৩৫

ইরানে কেন এখন হামলা চালাল ইসরায়েল?

ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়, ১৩ জুন ভোরে। ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ইসরায়েলের সরাসরি সামরিক অভিযানের কারণে। ইরানের অভ্যন্তরে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে তেলআবিব, যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম সাহসী ও উচ্চপর্যায়ের অভিযানের নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই হামলার ধরন, পরিসর ও কৌশলগত লক্ষ্য—সব কিছুই ইঙ্গিত দেয় যে এটি ছিল বহুস্তর বিশ্লেষণ করে নেওয়া সিদ্ধান্তের ফল। শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণের মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে ইসরায়েল।

সূত্র বলছে, শুক্রবার ভোররাতে চালানো এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু উচ্চ নিরাপত্তার ভবন। লক্ষ্য ছিল কেবল অবকাঠামো ছিল নয়, বরং ইরানের সামরিক নেতৃত্বকেই। নিহত হয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রভাবশালী কমান্ডার, এমনকি কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও।

এ ধরনের হামলার পরিকল্পনা নতুন নয়। কয়েক মাস আগে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত ইসরায়েলি অভিযানে এ কৌশলই দেখা গিয়েছিল—নেতৃত্ববিনাশ। সেসময় সংগঠনটির শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ার পর দীর্ঘ মেয়াদে হিজবুল্লাহর হামলা সক্ষমতা ভেঙে পড়ে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে এবার অনেকটা একই ধরনের ছক অনুসরণ করেছে ইসরায়েল।

কিন্তু কেন এখন?
প্রথমত, এটি একটি কৌশলগত সময়। একদিকে, ইসরায়েল মনে করছে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। একটি গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়েছে—তেহরানের কাছে এমন ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যা দিয়ে মাত্র কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে ১৫টির মতো পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব।

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শুরু থেকেই বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে তুলে ধরছেন। অতীতে বহুবারই তিনি বলেছেন—পারমাণবিক ইরান মানেই ইসরায়েলের জন্য বিপর্যয়।

দ্বিতীয়ত, সময়টি নির্বাচিত হয়েছে কূটনৈতিক পর্যায়ে চলমান এক স্পর্শকাতর আলোচনার পটভূমিতে। ওমানে শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া বানচাল করাই ইসরায়েলের উদ্দেশ্য হতে পারে, কারণ তারা বরাবরই এ ধরনের চুক্তির বিরোধী।

তৃতীয়ত, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপ। গাজায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থতা এবং জনসমর্থনের অবক্ষয় নেতানিয়াহুকে কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলি পার্লামেন্টে আগাম নির্বাচন নিয়ে যে ভোটাভুটি হয়েছে, তাতেও তার অবস্থান বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এমন সময় বড় কোনো সামরিক অর্জন তার জন্য রাজনৈতিকভাবে জীবনরক্ষাকারী হয়ে উঠতে পারে।

আরেকটি বিষয় হলো—ইসরায়েলের বিশ্লেষণে এখন মনে হচ্ছে ইরান ও তার আঞ্চলিক মিত্রগোষ্ঠীগুলোর (বিশেষ করে হিজবুল্লাহ) আক্রমণাত্মক ক্ষমতা বিগত সময়ের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে। তাই এখনই উপযুক্ত সময়, যখন তেহরানের ওপর বড় আঘাত হানা যেতে পারে তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে।

তবে এই হামলা শেষ পর্যন্ত কতটা কৌশলগত সুফল বয়ে আনবে, কিংবা এটি একটি ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে কি না—তা এখনো বলা যাচ্ছে না। ইরান সরাসরি পাল্টা জবাব দিলে তা গোটা অঞ্চলকেই জর্জরিত করতে পারে আরও বিস্তৃত সংঘাতে।

সুতরাং, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক অস্থিরতার সূচনা হয়ে গেলেও, এর সমাপ্তি কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই এখন বিশ্বজুড়ে কূটনীতিকদের দুশ্চিন্তার বড় বিষয়।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ যুদ্ধ ইরান

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর