Logo

আন্তর্জাতিক

এই সময়েই কেন ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল? এরপর কী...

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ২০:১২

এই সময়েই কেন ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল? এরপর কী...

ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও সামরিক ঘাঁটি। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এটিই ইরানের ভূখণ্ডে চালানো সবচেয়ে বড় আক্রমণ। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো এই অভিযানে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ছাড়াও বিমান প্রতিরক্ষা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ফলে ইরানের পাল্টা আঘাতের সক্ষমতা অনেকটাই খর্ব হয়েছে।

তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান, সেনাবাহিনীর চিফ ও আইআরজিসির বিমান শাখার প্রধান নিহত হয়েছেন। ইরান দাবি করেছে, নিহতদের মধ্যে নয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীও রয়েছেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, হামলায় ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও এই সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, মোসাদ ইরানের ভেতর থেকেই ড্রোনের মাধ্যমে হামলা পরিচালনা করেছে। ইসরায়েলের দীর্ঘ দিনের লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করা। এবার তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

কেন এই সময়েই হামলা?
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের শঙ্কা, ইরান গোপনে ‘ব্রেকআউট সক্ষমতা’ গড়ে তুলছে—অর্থাৎ স্বল্প সময়ের মধ্যে পরমাণু বোমা তৈরি ও মোতায়েন করার মতো ক্ষমতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও ইরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং রাশিয়ার সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।

২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানও চুক্তির শর্ত মানা বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি, জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ অভিযোগ করেছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের এই অভিযান ইরানের পরমাণু প্রকল্পকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিতে পারে। তবে দেশটির সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া আরও গতি পেতে পারে।

এরপর কী?
ইসরায়েল চায়, এই হামলার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস কিংবা দীর্ঘ সময়ের জন্য থামিয়ে দিতে। একই সঙ্গে তারা আশা করছে, এর ফলে ইরানের বর্তমান শাসন কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মুহূর্তে ইরানকে একটি ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ দেওয়ার কথা বললেও ইসরায়েল সেই কূটনৈতিক উদ্যোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের আশঙ্কা, এই আলোচনার আড়ালে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে কোনো গোপন সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে।

এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর প্রতিশোধ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে ইরানের জন্য সেই প্রতিশোধ নেওয়াটা এখন খুব একটা সহজ নয়।

পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা উল্টো ফল দিতে পারে। ইরানের মধ্যে যারা এতদিন পারমাণবিক বোমার পক্ষে ছিল না, তারাও এখন এই অস্ত্রকেই জাতীয় নিরাপত্তার একমাত্র ভরসা হিসেবে ভাবতে পারেন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন পরমাণু প্রতিযোগিতার সূচনা হতে পারে, যেখানে সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিশরও পরমাণু অস্ত্র অর্জনের পথে হাঁটবে।

লিবিয়ার গাদ্দাফির পরিণতির কথা মনে রেখে ইরানের কট্টরপন্থীরা এখন পরমাণু অস্ত্রকেই একমাত্র নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হিসেবে বিবেচনা করছে। আর উত্তর কোরিয়ার পথ দেখাচ্ছে যে, এই পথে গেলে পশ্চিমা আক্রমণকে ঠেকানো সম্ভব।

ইসরায়েলি অভিযান ‘রাইজিং লায়ন’-এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ইরানকে ধাক্কা দেওয়া গেলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিকে এক বিপজ্জনক মোড়ে নিয়ে যাওয়া। এই সংঘাত আর শুধু তেহরান ও তেলআবিবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না—এর ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ইরান মধ্যপ্রাচ্য

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর