Logo

আন্তর্জাতিক

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় ২৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ২১:৩১

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় ২৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার

বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে /ছবি : সংগৃহীত

ভারতের আহমেদাবাদে সংঘটিত ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার তৃতীয় দিনেও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। শনিবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।

লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭ বিমানটি আহমেদাবাদের একটি আবাসিক এলাকার মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের এক মিনিটের মধ্যেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানের ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন। এছাড়া সবাই নিহত হন। আর বিমানের বাইরে থাকা অন্তত ২৯ জন প্রাণ হারান।

শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও অন্তত ২৫টি মরদেহ উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ধবল গামেতি বলেন, হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ২৭০টি মরদেহ এসেছে। একমাত্র জীবিত যাত্রীকে এখনো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘সে এখন অনেকটাই সুস্থ। যেকোনো সময় ছাড়পত্র পেতে পারেন।

দুর্ঘটনায় নিহতদের শত শত আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে এসে ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। অধিকাংশ মরদেহ এতটাই পুড়ে গেছে বা বিকৃত হয়েছে যে, চেহারা দেখে চেনা সম্ভব নয়।

শনিবার কয়েকজন আত্মীয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিচয় নিশ্চিত করতে দীর্ঘ সময় লাগছে। 

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডিএনএ মেলাতে সাধারণত ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে, তবে তারা প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করার চেষ্টা করছেন।

তেমনি একজন রফিক আবদুল্লাহ। ফ্লাইটে তার ভাগনে, পুত্রবধূ ও দুই নাতি-নাতনি ছিলেন। 

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা কোথায়? তাদের খুঁজে পেয়েছেন? আমাকে উত্তর দিতে হবে। সরকার কোনো উত্তর দিচ্ছে না।’

একজন স্বজন হাসপাতালের কর্মীদের বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, কবে তার আত্মীয়ের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘দয়া করে মরদেহটা আমাদের দেয়ে দেন।’

বিমান দুর্ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্তের পাশাপাশি, ভারত সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। যারা দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রটোকল প্রণয়নের কাজ করবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই কমিটি কোনো বিদ্যমান তদন্তের বিকল্প নয়।

বিমান দুর্ঘটনার পর ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু শনিবার দিল্লিতে তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে জানান, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ বিমানগুলোর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৩৪টি বিমানের মধ্যে আটটি ইতোমধ্যে পরীক্ষা হয়েছে, বাকি বিমানগুলোও ‘জরুরি ভিত্তিতে’ পরীক্ষা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার তদন্ত করছে এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। সরকার তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

শুক্রবার তদন্তকারীরা দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’ বা ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করেন। এটি দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি ভবনের ছাদ থেকে পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই যন্ত্র থেকেই দুর্ঘটনার কারণ জানার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলবে।

এএআইবি জানায়, তারা ডেটা বিশ্লেষণের কাজে ‘সম্পূর্ণ শক্তি’ প্রয়োগ করেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্সটিটিউশন অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্সের সদস্য ও প্রকৌশলী পল ফ্রম বলেন, ডেটা রেকর্ডার থেকে ইঞ্জিন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। আর ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বিমানের চালকদের কথোপকথন প্রকাশ করবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক তদন্তকারী ও বর্তমানে বিমান নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেফ গুজ্জেত্তি বলেন, যদি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারটি ভালো অবস্থায় থাকে, তাহলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ নির্ধারণ সম্ভব হতে পারে।

তিনি জানান, তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখবেন, বিমানের ডানার ফ্ল্যাপ সঠিকভাবে সেট করা ছিল কি না, ইঞ্জিনে শক্তি ছিল কি না, ককপিটে কোনো সতর্ক সংকেত বেজেছিল কি না এবং বিমান ক্রুরা বাইরে প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও জ্বালানি ওজনের মতো বিষয়গুলো সঠিকভাবে নথিভুক্ত করেছিল কি না।

গুজ্জেত্তির মতে, তথ্য ভুল হলে ডানার ফ্ল্যাপের সেটিংস ভুল হতে পারে। যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল ১২ বছর পুরোনো একটি বোয়িং ৭৮৭। বোয়িং ব্র্যান্ডের অন্যান্য বিমানে আগেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা গেছে।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২শ ড্রিমলাইনার চলাচল করছে। তবে ১৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মারাত্মক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় পড়ল এই মডেলের বিমান।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ভারত বিমান দুর্ঘটনা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর