Logo

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল না ইরান, কার সাথে ভারত?

Icon

আল-জাজিরা

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১৭:৩৯

ইসরায়েল না ইরান, কার সাথে ভারত?

সদস্য হয়েও নিন্দা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেনি ভারত /ছবি : সংগৃহীত

ইরানে চলমান ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) একটি বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু সদস্য হয়েও সেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি ভারত। এর মাধ্যমে সংগঠনের ভেতরে একটি বিভাজনের ইঙ্গিত দিল নয়া দিল্লি।

এই মুহূর্তে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত ক্রমশই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শুক্রবার ইসরায়েল যখন ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তখন শুরু হয় নতুন করে যুদ্ধ। এর আগেও ২০২৪ সালে দুই দফা সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। যার সূচনা হয়েছিল ইসরায়েলের হামলা আর পাল্টা জবাব হিসেবে ইরানের পাল্টা হামলায়।

ইরানের দাবি, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক, পরমাণু বিজ্ঞানী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আইআরজিসি ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। শনিবার ইসরায়েল দেশটির বিভিন্ন শহরে অবকাঠামোগত স্থাপনায়, বিশেষ করে তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানি সংরক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালায়।

জবাবে তেহরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে তেলআবিব ও হাইফায়। এতে ইসরায়েলে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়, বহু মানুষ আহত হয়। তেহরান এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনাও স্থগিত করে।

এসসিও কী বলেছিল?
চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ—এসসিওর ১০ সদস্যদেশের পক্ষ থেকে শনিবার এক বিবৃতি আসে, যাতে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। তারা একে ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল বলেও উল্লেখ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের বেসামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের এই আগ্রাসন শুধু আন্তর্জাতিক আইন নয়, জাতিসংঘ সনদও লঙ্ঘন করেছে। এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তায় মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

তারা পারমাণবিক ইস্যুতে কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক পথেই সমাধানের পক্ষে অবস্থান জানায়।

ভারত কেন দূরে থাকল?
ইসরায়েল তেহরানে হামলা চালানোর পরপরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমিয়ে আনার অনুরোধ জানান।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন জানায়, তারা ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে’ এবং ‘আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাস’ চায়।

কিন্তু এসসিওর বিবৃতিতে ভারত কোনো অংশ নেয়নি। বরং নয়া দিল্লি জানিয়ে দেয় যে, তারা এই বিবৃতির আলোচনায় অংশ নেয়নি এবং নিজের অবস্থান আগেই সদস্যদের জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত এমন এক কূটনৈতিক অবস্থানে আছে, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক— দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৪ সালেই গাজা যুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় অস্ত্র নির্মাতারা ইসরায়েলকে রকেট ও বিস্ফোরক সরবরাহ করেছে। আবার ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারত বহু মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যা আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভারতের কৌশলগত প্রবেশদ্বার।

বিশ্লেষক শ্যান্থি ডি’সুজা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ভারত এক ধরনের সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করছে। এজন্যই এসসিওর বিবৃতি থেকে দূরে থাকাটা প্রত্যাশিত।

ভারত কি ইসরায়েলের পক্ষ নিচ্ছে?
সরাসরি নয়। তবে এসসিও বিবৃতি থেকে বিরত থেকে এবং জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি অস্ত্রবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকে ভারত কার্যত ইসরায়েলের প্রতি কিছুটা সহানুভূতির ইঙ্গিত দিয়েছে।

নয়া দিল্লিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কবীর তানেজা মনে করেন, ভারতের এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়। কারণ জুলাইয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে চায় ভারত, যার ওপর দেশটির পণ্যে ট্রাম্প ঘোষিত ২৭ শতাংশ শুল্ক নির্ভর করছে।

ভারতের কৌশলগত স্বার্থ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু ইসরায়েল বা ইরান নয়—ভারতের আরও বিস্তৃত স্বার্থ আছে মধ্যপ্রাচ্যে। এই অঞ্চলের তেল, বাণিজ্য, অভিবাসী শ্রমিক ও বিনিয়োগের সঙ্গে ভারতের অনেক কিছু জড়িত।

কবীর তানেজা বলেন, এসসিওতে ভারত একধরনের ‘আউটসাইডার’। চীন-রাশিয়া যখন ইরানের ঘনিষ্ঠ, তখন ভারতও যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। এই অবস্থায় এসসিওর বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করাটা ভারতের জন্য কৌশলগত বাস্তবতা।

মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, ভারত বরাবরই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলে। যেমন- আমেরিকা ও রাশিয়া, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন, সৌদি আরব ও ইরান। তবে তাকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ভারসাম্য হারিয়ে না ফেলে।

ভারতের অনেক স্বার্থ আছে মধ্যপ্রাচ্যে, যেগুলো কেবল ইসরায়েলেই সীমাবদ্ধ নয়। সেগুলোকে ক্ষতির মুখে ফেললে তা দিল্লির জন্য বিপদ ডেকে আনবে, বলেন কুগেলম্যান।

ভারত এসসিও’র বিবৃতিতে অংশ নেয়নি, কারণ ইসরায়েল ও ইরান দুই পক্ষের সঙ্গেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দিল্লি এই সংঘাতে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে চাইছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের বৃহত্তর কৌশলগত স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ভারত ইরান

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর