মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে জি-৭ এর যৌথ বিবৃতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১১:১৯

বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট জি-৭ নেতারা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত বিশেষ করে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছেন। কানাডায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা অঞ্চলটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’
তবে সম্মেলনের মাঝপথেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ কানাডা ত্যাগ করেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, ‘আমি দ্রুত ফিরে যেতে চাই—এর কারণ আপনারা জানেন।’
ইসরায়েল ও ইরান টানা পঞ্চম দিনের মতো একে অপরের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ট্রাম্প ওয়াশিংটনে ফিরে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে যোগ দেবেন।
এদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতে অতিরিক্ত সামরিক শক্তি পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ইরানবিরোধী অভিযানে সরাসরি যোগ দিচ্ছে না।
হোয়াইট হাউজ দাবি করেছে, ট্রাম্প ‘চমৎকার একটি দিন’ কাটিয়েছেন এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ট্রাম্প সোমবার রাতের ডিনারের পর সম্মেলনস্থল কানাডার কানানাস্কিস ছেড়ে যাচ্ছেন ‘মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতির কারণে’। তবে তিনি এর বেশি কিছু জানাননি।
এর ফলে ট্রাম্প মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবামের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
ফটোসেশনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বড় কিছু নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।’
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে তিনি লেখেন, ‘সরাসরি বলছি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না। আমি বারবার এটি বলেছি!’
তিনি ইরানবাসীদের রাজধানী তেহরান ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ ছেড়ে দিতে বলেন, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ইসরায়েল-ইরান পরিস্থিতির অবনতি
ট্রাম্পের সতর্কবার্তার কিছুক্ষণ পর ইরানি গণমাধ্যম জানায়, মঙ্গলবার ভোরে তেহরানে বিকট বিস্ফোরণ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে পড়ে। এর আগে ইসরায়েল ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যেখানে এক উপস্থাপক লাইভ সম্প্রচার ছেড়ে পালিয়ে যান।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের তেল আবিবে আবারও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সাইরেন বেজে ওঠে এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
জি-৭ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধবিরতি আনতে পারে, তাহলে সেটি অত্যন্ত ইতিবাচক হবে।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের দ্রুত ফিরে যাওয়া বোঝা যায়।’
তবে সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বিবিসি জানায়, ট্রাম্প শুরুতে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে সম্মেলনের বিবৃতিতে সম্মতি দিতে চাননি। শেষ পর্যন্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ইরানই মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসবাদের মূল উৎস। আমরা বরাবরই বলে আসছি, ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না।’
গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলার পর থেকে দেশটি দাবি করছে, তারা ইরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং অনেক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে।
তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের গভীর পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে প্রয়োজন এমন বাংকার-বাজফোরানো বোমা ও বোমারু বিমান। যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে, বিশেষ করে ফোর্ডোর মতো স্থাপনাগুলো ধ্বংসে।
ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত তাদের দেশে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, ইরানের পাল্টা হামলায় ২৪ জন তাদের দেশে প্রাণ হারিয়েছেন।
ওএফ