গাজায় খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১৪:৩৭

রাফায় একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত স্বজনের জন্য কান্না করছেন এক নারী। ছবি : হাতেম খালেদ/রয়টার্স
ফিলিস্তিনের গাজায় খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে জড়ো হওয়া জনতার ওপর আবারও গুলিবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই দক্ষিণ গাজার রাফা অঞ্চলের বাসিন্দা।
গত মে মাসের শেষ দিকে এই বিতরণ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়াও অন্তত দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
গাজার চিকিৎসা সূত্রগুলো আল জাজিরাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নতুন মানবিক সহায়তা বিতরণ পদ্ধতি চালুর পর থেকে সোমবারের ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। গত মাসের শেষ দিক থেকে এই সহায়তা ব্যবস্থা কার্যকর হলেও, প্রায় প্রতিদিনই গুলিতে হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে সোমবারের এই গুলির ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য আসেনি।
অতীত ঘটনাগুলোর মতো এবারও সেনাবাহিনী সাধারণত দাবি করে থাকে যে, তাদের সৈন্যরা ‘সন্দেহভাজনদের’ লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি চালায়। তবে এসব গুলি মানুষকে আঘাত করেছে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেনি।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, তারা এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি যেখানে হয় অনাহারে মরতে হবে, না হয় খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ দিতে হবে।
বিতরণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যাকে সমর্থন দিচ্ছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নতুন এই জিএইচএফ-ভিত্তিক সহায়তা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস যাতে সাহায্যের চালান থেকে কিছু নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
অথচ জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই দাবি নাকচ করে বলছে, হামাস কর্তৃক সহায়তা ‘চুরি’ ব্যাপকভাবে হচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
তারা অভিযোগ করেছে, জিএইচএফের এই নতুন পদ্ধতি কার্যকরভাবে খাদ্যকে একটি যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত করছে। ইসরায়েল এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ গাজায় জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে।
জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ব্যবস্থা জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
সোমবার ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সংস্থা ডাক্তারস উইদাউট বর্ডারসের এক কর্মকর্তা আন্না হ্যালফোর্ড। তিনি বলেন, ইসরায়েলের ‘সহায়তা চুরি’ অভিযোগগুলো প্রতারণাপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যার উদ্দেশ্য জাতিসংঘের কার্যকর মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা ধ্বংস করা।
তিনি বলেন, এটি কোনো মানবিক ব্যবস্থা নয়, এটি মূলত একটি প্রাণঘাতী বিশৃঙ্খলা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং খাদ্য সহায়তা প্রবেশে বাধার কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হয়ে উঠছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৪৩২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ২৮ হাজার ৯২৩ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত ও ২০০-র বেশি মানুষ জিম্মি করা হয়।
ওএফ