ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষতির চিত্র জানাল আইএইএ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১৬:২২

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় ইসরায়েলের হামলার পরিস্থিতি নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করার কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশে এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সংস্থাটি নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। হামলা শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে, আরাক, ইসফাহান, নাতাঞ্জ ও তেহরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এসব ক্ষতির কারণে সম্ভাব্য বিকিরণের প্রভাবও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আইএইএ-এর নতুন প্রতিবেদনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বর্তমান অবস্থা নিম্নরূপ:
নাতাঞ্জ নাতাঞ্জের জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি ইসরায়েলি হামরার কবলে পড়ে গত ১৩ জুন।
ওই টার্গেট হামলায় উপরভাগের পরীক্ষামূলক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যায়। যেখানে ইরান ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত (ইউ-২৩৫) সমৃদ্ধ করতে পারতো। ওই হামলায় কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ সরবরাহ অবকাঠামো, প্রধান পাওয়ার বিল্ডিং, জরুরি বিদ্যুৎ সেবা ও ব্যাকআপ জেনারেটর ধ্বংস হয়ে যায়।
রাফায়েল গ্রোসি গত ১৬ জুন আইএইএ বোর্ডে জানান, যখন ভূগর্ভস্থ ক্যাসকেড বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়, তখন সেন্ট্রিফিউজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পরবর্তীতে, স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে জানা যায় ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ স্থল সরাসরি ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রের বাইরে এখন পর্যন্ত কোনো বিকিরণের প্রভাব দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রের ভিতরে কিছু ‘সীমিত রেডিওঅ্যাকটিভ ও রাসায়নিক দূষণ’ ঘটেছে। এই দূষণ কেবল কেন্দ্রের ভেতরে সীমাবদ্ধ, এর বাইরে কোনো ধরনের বিকিরণের প্রভাব পড়েনি।
ইসফাহান
গত শুক্রবারের হামলায় ইসফাহান পরমাণবিক স্থাপনার চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় রাসায়নিক গবেষণাগার, ইউরেনিয়াম রূপান্তর কর্মশালা, তেহরান রিয়্যাক্টর জ্বালানি তৈরির কারখানা এবং নির্মাণাধীন উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা।
নাতাঞ্জের মতো, ইসফাহানের বাইরে বিকিরণের মাত্রা অপরিবর্তিত রয়েছে।
অন্যান্য স্থান ১৮ জুন আইএইএ জানিয়েছে ইসরায়েল কারাজ ওয়ার্কশপ (টিইিএসএ) এবং তেহরান গবেষণা কেন্দ্রের কুইন্টার-উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে টার্গেট করেছে।
এই দুটো স্থাপনাই পরমাণু চুক্তির অধীনে আইএইএ-এর নজরে ছিল।
তেহরান গবেষণা কেন্দ্রের একটি ভবনে সেন্ট্রিফিউজ রটার তৈরির কেন্দ্র ও পরীক্ষা কেন্দ্র লক্ষ্য করা হয়। কারাজ ওয়ার্কশপে বিভিন্ন সেন্ট্রিফিউজ উপাদান উৎপাদনের দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
খানদাব রিঅ্যাক্টর
১৯ জুন লক্ষ্যবস্তু হয় আরাক বা খানদাব ভারী পানি গবেষণা রিয়্যাক্টর, যা এখনো নির্মাণাধীন, চালু হয়নি।
গ্রোসি বলেন, পারমাণবিক পদার্থ না থাকায় ‘এই হামলায় কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে না।’
প্রথমে পার্শ্ববর্তী ভারী পানি উৎপাদন প্ল্যান্টে কোন ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়নি, বর্তমানে জানা গেছে গুরুত্বপূর্ণ ভবন পরিশোধন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ইরানের অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনায় এখনো কোনো ক্ষয়ক্ষতির আলামত পাওয়া যায়নি।
এ পর্যন্ত বড় কোনো বিকিরণ বিপর্যয় হয়নি। তবে আইএইএ মহাপরিচালক সতর্ক করে বলেছেন, ‘ইরানে বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পারমাণবিক পদার্থ রয়েছে, যার ফলে বিকিরণ দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার একটি আশঙ্কা রয়েছে।’
ওএফ