ব্রিটিশ ঘাঁটিতে অভিযান, অভিনব কৌশলে বিকল ২ যুদ্ধবিমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১৯:৫৭

ব্রিটেনের অক্সফোর্ডশায়ারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি আরএএফ ব্রাইজ নর্টনে ঢুকে পড়েন ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীরা। তারা ঘাঁটির ভেতরে থাকা দুটি যুদ্ধবিমান লাল রঙ দিয়ে ঢেকে দেয়। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ফাঁকফোকর দেখা দিয়েছে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ঘটনাটিকে অসভ্যতা ও ন্যাক্কারজনক নাশকতা বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, এটি এক ধরনের নৈরাজ্য ও সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা, যা কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য নয়।
‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামে পরিচিত এক ফিলিস্তিনপন্থী কর্মী সংগঠন শুক্রবার (২০ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে। এতে দেখা যায়, রাতের আঁধারে দুজন কর্মী স্কুটার নিয়ে ঘাঁটির ভিতরে প্রবেশ করে একটি এয়ারবাস ভয়েজার বিমানের জেট ইঞ্জিনে লাল রঙ স্প্রে করছে।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জানিয়েছে। এ ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে থেমস ভ্যালি পুলিশ। পাশাপাশি সামরিক ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশন দাবি করেছে, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করেছে। বিমানের ইঞ্জিনে রঙ ছিটিয়ে আকাশপথে জ্বালানি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত এই ট্যাঙ্কারগুলিকে অচল করে দিয়েছে।
তবে আরএএফ প্রকৌশলীরা এখন বিমানগুলোর ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছেন। এক প্রতিরক্ষা সূত্র বিবিসিকে বলেন, এই ঘটনা সামরিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে না।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল সরকারের নিন্দা জানালেও, ব্রিটেন এখনো গোপনে গাজায় নজরদারি বিমান পাঠায়। মার্কিন ও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে জ্বালানি সরবরাহ করে এবং সামরিক মালামাল পাঠায়।
আরএএফ ব্রাইজ নর্টন ঘাঁটি ব্রিটিশ স্ট্র্যাটেজিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট ও রিফুয়েলিংয়ের প্রধান কেন্দ্র। যা সাইপ্রাসের আরএএফ আকরোতিরি ঘাঁটির সাথে যুক্ত। গাজা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখান থেকেই নজরদারি বিমান পাঠিয়েছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী।
ঘাঁটির চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী, সিসিটিভি, সেন্সর, প্রহরী ও মাঝে মাঝে টহল ব্যবস্থাও রয়েছে। তবু প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো বলছে, এই ধরনের বড় ঘাঁটির প্রতিটি ইঞ্চি ঢেকে রাখা সম্ভব নয়।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই প্যালেস্টাইন অ্যাকশন অস্ত্র কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। গেল মে মাসে তারা আয়ারল্যান্ডে একটি মার্কিন সামরিক বিমানে রঙ ছিটিয়ে একই ধরনের অভিযান চালানোর দায় স্বীকার করে।
এই সংগঠন জানায়, দাহ্য পদার্থ স্প্রে করার জন্য তারা ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র) ব্যবহার করেছে। তাদের দেওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন কর্মী স্কুটারে চড়ে রানওয়েতে ঢুকে পড়ে এবং বিমান লক্ষ্য করে রঙ ছিটায়। তারা দাবি করেছে, ক্রোবার দিয়েও অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে, যদিও সেটি ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি।
তবে ঘাঁটিতে থাকা প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত ভেসপিনা বিমানটিকে তারা স্পর্শ করেনি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিযুক্ত বিমানগুলো ইসরায়েলি বিমানকে জ্বালানি সরবরাহে জড়িত ছিল না। বরং মধ্যপ্রাচ্যে আইএসবিরোধী অভিযান ও রেড সিতে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে।
থেমস ভ্যালি পুলিশ নিশ্চিত করেছে, ঘাঁটিতে প্রবেশ করে অপরাধমূলক ক্ষতি করার একটি রিপোর্ট তারা পেয়েছে।
ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত চলছে, বলেছে পুলিশ।
প্রাক্তন নৌপ্রধান ও লেবার পার্টির সাবেক নিরাপত্তামন্ত্রী লর্ড ওয়েস্ট বলেন, আমি সব বিস্তারিত জানি না, তবে ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমন ঘটনা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি এক বড় হুমকি।
কনজারভেটিভ নেতা কেমি ব্যাডেনোক বলেছেন, এটি কোনো বৈধ প্রতিবাদ নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপরাধ। আমাদের সমাজকে ধ্বংস করার অপচেষ্টাকারী উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে আর সহ্য করা যাবে না।
সশস্ত্রবাহিনী বিষয়ক শ্যাডোমন্ত্রী মার্ক ফ্রান্সোয়া বলেন, বড় বিমানের ইঞ্জিনে নাশকতার চেষ্টা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জবাব দিতে হবে, কীভাবে এত নিরাপত্তার মাঝেও এভাবে কেউ ভেতরে ঢুকে পড়ল।
স্থানীয় লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি চার্লি মেইনার্ড ঘটনাটিকে বোকামি ও বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
ওএফ