হানিমুনে গিয়ে স্ত্রী আটক, একা ফিরলেন টেক্সাসের তরুণ

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:০৬

টেক্সাসের আরলিংটনের বাসিন্দা তাহির শেখ তার স্ত্রী ওয়ার্ড সাকেইক /ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবতা আবারও এক মানবিক ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে। টেক্সাসের আরলিংটনের বাসিন্দা তাহির শেখ তার স্ত্রী ওয়ার্ড সাকেইককে নিয়ে হানিমুনে গিয়েছিলেন ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডসে। কিন্তু হানিমুনের মাঝপথেই স্ত্রীর গ্রেফতারে গল্পের মোড় বদলে যায়। এখন এই নবদম্পতির মধ্যে ১২০ দিনের বেশি সময় ধরে আলাদা থাকতে হচ্ছে। কারণ স্ত্রী সাকেইক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আটককেন্দ্রে বন্দি।
তাহির শেখ জানান, তার স্ত্রী ওয়ার্ড সাকেইকের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কোনো পূর্বপরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করেনি। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট থমাসে থাকাকালীন, যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, তখন সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থা (সিবিপি) তাকে আটক করে।
ওয়ার্ড সাকেইক মূলত এক ‘রাষ্ট্রহীন’ ব্যক্তি, তিনি এমন একটি দেশে জন্মেছেন, যা জন্মসুত্রে নাগরিকত্ব দেয় না। তিনি এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী, যিনি সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু সৌদি আরব তাকে তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
মাত্র ৮ বছর বয়সে সাকেইক তার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তাদের আশ্রয় আবেদন শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করা হলেও, তাদের নাগরিকত্ব না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের নির্বাসন করতে পারেনি। ফলে তাদের প্রতি বছর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেক ইন করার শর্তে ‘তত্ত্বাবধান আদেশ’ দেওয়া হয়।
এই দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সাকেইক নিয়ম মেনে চলেছেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আরলিংটন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং বর্তমানে তিনি একজন পেশাদার ওয়েডিং ফটোগ্রাফার। কিন্তু আইনি জটিলতায় তার গ্রিনকার্ড আবেদনের প্রক্রিয়া এখন আটকে গেছে, কারণ তিনি আটকাবস্থায় রয়েছেন।
তাদের আইনজীবীরা এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যেন সাকেইকের নির্বাসন ঠেকানো যায়।
যদিও আইসিই নিয়ম অনুযায়ী, যাদের দেশচ্যুত করা সম্ভব নয় এমন ‘রাষ্ট্রহীন’ ব্যক্তিদের সাধারণত ৯০ দিনের পর ছেড়ে দেওয়ার কথা। সাকেইকের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি ইতিমধ্যেই ১২০ দিনের বেশি সময় ধরে বন্দি অবস্থায় আছেন।
তাহির শেখ বলেন, ‘এই জীবনের এই পর্যায়টা আমি যদি পার হয়ে যেতে পারি, তাহলে আর কিছুই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়।’ হানিমুনের জন্য তারা ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডসকে বেছে নিয়েছিলেন এই বিশ্বাস থেকে যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চল হওয়ায় তার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে সমস্যা হবে না।
আইসিই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাকেইকের গ্রেপ্তার কোনো নির্দিষ্ট অভিযান ছিল না। তার বিরুদ্ধে ২০১১ সাল থেকে চূড়ান্ত নির্বাসন আদেশ রয়েছে। তার আপিল ২০১৪ সালে খারিজ হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, তিনি ২০১১ সাল থেকেই চূড়ান্ত নির্বাসনের মুখে রয়েছেন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সমস্ত সুযোগ ইতোমধ্যে শেষ করেছেন।
এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি দম্পতির ব্যক্তিগত দুর্ভোগ নয়; এটি আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার অমানবিক বাস্তবতা বিশেষ করে ‘রাষ্ট্রহীন’ অভিবাসীদের জন্য, যাদের নেই কোনো নাগরিকত্ব, নেই নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা এবং যাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই একটি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে লেখা।
ওএফ