নিউজ ইসরায়েলের প্রতিবেদন
ইরানি হামলায় ইসরায়েলে ৭৫ বছরের ক্ষতির রেকর্ড ছাপিয়ে গেল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১৬:২৩

ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর এত ক্ষয়ক্ষতি দেখেনি দেশটির নাগরিকরা /ছবি : সংগৃহীত
মাত্র এক সপ্তাহে ইরান যে পরিমাণ ক্ষতি ইসরায়েলকে করেছে, তা ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর দেখেনি দেশটির নাগরিকরা। গত কয়েক দশক ধরে হিজবুল্লাহ, হামাস, পিআইজে বা হুথি মিলিশিয়াদের মাধ্যমে সংঘটিত ক্ষতির তুলনায়ও অনেক বেশি ভয়াবহ ও ‘অকল্পনীয়’। এমন মন্তব্য উঠে এসেছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিউজ ইসরায়েল-এর বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল তার নিজস্ব ক্ষয়ক্ষতি বরাবরই গোপন রাখে, যা একটি ছোট দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা। তবে এই মুহূর্তে ইরানি হামলার বাস্তবতা অস্বীকার করা কঠিন। ১৩ জুন ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর পাল্টা জবাব হিসেবে তেহরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলে।
ইরানের হামলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইসরায়েলের ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক অ্যালন চেন বলেন, ‘একটি ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের গবেষণা কেন্দ্রের একাধিক ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে এবং দশকের পর দশক ধরে চলা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।’
ইউরোপীয় গবেষণা কাউন্সিলের (ইআরসি) অর্থায়নে পরিচালিত কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি গবেষণা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, অন্তত ৪৫টি গবেষণাগার পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে হৃদপিণ্ডের টিস্যু ও জেনেটিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ নমুনাও রয়েছে। দ্য জেরুজালেম পোস্ট একে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেছে।
অধ্যাপক সারেল ফ্লেইশম্যান বলেন, ‘কিছু উপাদান এমন ছিল, যেগুলো পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব। সেগুলো চলে যাওয়ায় আমাদের বিজ্ঞানী সমাজের এক বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।’
ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণের এক ইতালীয় গবেষক ছাত্রী বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই সবকিছু পুড়ে গেল। পাশের পুরো গবেষণাগার এক মিনিটেই ধ্বংস হয়ে যায়।’
টিআরটি গ্লোবালের মতে, ইসরায়েল যখন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছিল, এই হামলা সেই হত্যারই প্রতিশোধস্বরূপ। এটি কেবল সামরিক নয়, বরং একপ্রকার প্রতীকী বার্তা।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে অন্তত ২৫ জন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং একটি তেল শোধনাগার।
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান জানিয়ে দিয়েছেন, তারা ‘দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিকে যেমন হামলার জবাব দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের ঘাটতিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে—বিশেষত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতির প্রশ্নে।