ইরানে মার্কিন হামলায় জাতিসংঘের নিন্দা, বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১৯:০৭

ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বোমা হামলা চালায়। রোববারের এ হামলায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ ঘটেছে বলে দাবি করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই হামলাকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে গুতেরেস বলেন, আজ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি এমন একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রার উত্তেজনা বৃদ্ধি, যা ইতিমধ্যেই সংকটের কিনারায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা উত্তেজনা প্রশমিত করে এবং জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের বিধান অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করে।
গুতেরেস সতর্ক করেন, এই উত্তেজনা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা মানবজাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হলো, যে দেশটি ১৩ জুন থেকে ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করাই তাদের উদ্দেশ্য। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শক্তির মাধ্যমে শান্তি—প্রথমে শক্তি, তারপর শান্তি।
ইসরায়েল দাবি করে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তাহলে তা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এই হামলার পাল্টা জবাবে ইরান একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যেগুলো ইসরায়েলের সামরিক ও বেসামরিক অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডস বাহিনী জানিয়েছে, তারা ওয়াশিংটনের এমন জবাব দেবে যা ‘তাদের অনুশোচনা করতে বাধ্য করবে’।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের গভীর লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে বলেন, আজ সকালে যা ঘটেছে তা নিন্দনীয় এবং এর দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি বয়ে আনবে।
তিনি আরও বলেন, ইরান তার সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ ও জনগণকে রক্ষার জন্য সব ধরনের উপায় অবলম্বন করবে।
টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, হামলাটি ‘চমৎকার সাফল্য’ এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ‘সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত ধ্বংস’ ঘটেছে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না, কারণ এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে।
তিনি সব পক্ষকে সংযত থেকে আলোচনায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ইরানকে পারমাণবিক ক্ষমতায় পরিণত হওয়ার হুমকি হ্রাসের কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভাজন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এ হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। সৌদি আরব ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওমান ও মিশরও একইভাবে হামলার বিরোধিতা করে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। কাতার বলেছে, এই উত্তেজনা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইরাক যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ আউন বলেন, এই হামলা আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা একাধিক দেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে।
বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্স ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাফায়েল দিয়াস-কানেল একমত হয়ে বলেন, এই হামলা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ভেনেজুয়েলা এটিকে ‘অবৈধ, অযৌক্তিক ও অত্যন্ত বিপজ্জনক আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
চিলির প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিচ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়, যা মানবজাতির জন্য নির্ধারিত নীতিমালাকে লঙ্ঘন করে।
ওএফ