ড. ইউনূস ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ সিদ্দিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ২২:০৭

ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক /ছবি : সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সুনাম নষ্টের উদ্দেশ্যে একটি ‘পরিকল্পিত প্রচারণা’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। এক আইনি চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, এই প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনি চিঠিটি বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই তদন্ত ও প্রচারাভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তা এখন বন্ধ হওয়া উচিত।
টিউলিপ সিদ্দিক জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে কুৎসা রটনা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, যা তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের পরিবেশ নষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, এই ধরনের প্রচারণা তাকে তার সাংসদ হিসেবে কাজ করতে বাধা দিতে পারবে না।
গত মার্চে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেন, টিউলিপ সিদ্দিকের অনেক সম্পদ বাংলাদেশে রয়েছে এবং তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
টিউলিপের আইনজীবীদের দাবি, এই মন্তব্য তদন্তকে প্রভাবিত করেছে এবং এর ফলে তা নিরপেক্ষতার ভিত্তি হারিয়েছে।
দুদক ইতোমধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারে তার পারিবারিক সম্পৃক্ততার কারণে তিনি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এই তদন্তে সহায়তা করছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এনসিএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন। গত মাসে লন্ডনের উত্তরে টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সম্পত্তি জব্দের আদেশ করা হয়।
তবে টিউলিপ সিদ্দিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ যেই ঠিকানায় নোটিশ পাঠাচ্ছে, সেটির সঙ্গে টিউলিপের কোনো সম্পর্ক নেই।
চলমান এই তদন্তে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাড়া না দিলে বিষয়টি তারা বন্ধ বলে ধরে নেবেন। চিঠিতে ৩০ জুনের মধ্যে জবাব দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্যে সফররত অবস্থায় টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন, তবে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। তখন ইউনূস জানান, চলমান আইনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চান না তিনি।
টিউলিপ সিদ্দিক এর আগে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পর নিজেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগকৃত মানদণ্ডবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে নিজেকে রিপোর্ট করেন। সেই মূল্যায়নে উল্লেখ করা হয়, তার বিরুদ্ধে অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে সম্পর্কের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি আরও সচেতন হতে পারতেন।
এদিকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন রয়েছেন। গত বছর দেশজুড়ে আন্দোলন, সহিংসতা ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর থেকেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে।
ওএফ