গাজায় এক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা দেখছেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১৩:০৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প /ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা উপত্যকায় এক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে যেসব ব্যক্তি কাজ করছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। যদিও এর বেশি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এ মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শীর্ষ সহযোগী ও কৌশলগত বিষয়কমন্ত্রী রন ডারমার আগামী সপ্তাহে গাজা ও ইরান ইস্যুতে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন সফর করবেন।
জানা গেছে, ট্রাম্প ইসরায়েলকে হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে চাপ দিচ্ছেন। একইসঙ্গে আব্রাহাম চুক্তি সম্প্রসারণেরও চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।
যুদ্ধবিরতি বিষয়ে নিজের সম্ভাব্য ধারণার কথা বলার পর ট্রাম্প গাজা মানবিক সহায়তা ফাউন্ডেশনে (জিএইচএফ) যুক্তরাষ্ট্রের ৩ কোটি ডলার অনুদানের বিষয়টি তুলে ধরেন। গত এক মাস ধরে এই ফাউন্ডেশন গাজায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘গাজায় যা চলছে তা একেবারেই ভয়াবহ… আমরা সেখানে প্রচুর অর্থ ও খাদ্য দিচ্ছি। দিতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই যুদ্ধে জড়িত নই, তবুও আমরা জড়িত কারণ মানুষ মারা যাচ্ছে। আমি যখন দেখি, ওখানে হাজার হাজার মানুষ আছে — খাবার নেই, কোনো কিছুই নেই…’
ট্রাম্প দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু সাহায্য খারাপ মানুষদের দ্বারা চুরি হয়ে যাচ্ছে, তবে জিএইচএফের নতুন ব্যবস্থা মোটামুটি ভালোই কাজ করছে।
তবে এই জিএইচএফের বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি যেতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। কারণ সেখানে খাবার নিতে গেলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।
ট্রাম্প বলেন, এই সহায়তা সংকট সমাধানে অন্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু জিএইচএফের বিতর্কিত পদ্ধতির কারণে (যেখানে ফিলিস্তিনিদের দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে এসে আইডিএফের নিরাপত্তা চৌকি পার হয়ে খাদ্য নিতে হয়) যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোনো দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হয়নি।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ সমর্থিত সহায়তা ব্যবস্থা গাজায় লুটপাটের কবলে পড়ছে। সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, ইসরায়েল যদি গাজায় খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বাড়ায়, তাহলে লুটপাটের মতো ঘটনা কমে যাবে। ইসরায়েল অবশ্য হামাসকে এই সহায়তা লুট করে নিজেদের যোদ্ধাদের কাছে বিক্রি করে অর্থ জোগানোর জন্য দায়ী করছে। যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
গত এক মাসে গাজায় গড়ে মাত্র ৫৬টি ট্রাক প্রবেশ করেছে, যা পরিমাণের চেয়ে অনেক কম। সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, বিপুল সংখ্যক মানুষের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিনই শত শত ট্রাক প্রয়োজন।
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। সেদিন ইসরায়েলে প্রায় ১২শ মানুষ নিহত হয় ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এখনও গাজা উপত্যকায় বিভিন্ন গোষ্ঠী ৫০ ইসরায়েলি জিম্মিকে আটক করে রেখেছে। যাদের মধ্যে ৪৯ জনই ৭ অক্টোবরের হামলার সময় অপহৃত হয়েছিলেন।
আইডিএফের তথ্যমতে, অন্তত ২৮ জনের মরদেহ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০ জন জীবিত আছেন ও আরও দু’জনের অবস্থা নিয়ে গভীর শঙ্কা রয়েছে। হামাস ২০১৪ সালে গাজায় নিহত এক আইডিএফ সেনার মরদেহও আটকে রেখেছে।
হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, লড়াই শুরুর পর থেকে গাজায় ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত বা নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব নয় এবং এতে বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে কোনো আলাদা হিসাব নেই।
ইসরায়েল বলছে, তারা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২০ হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং ৭ অক্টোবরের হামলার সময় ইসরায়েলের ভেতর প্রায় এক হাজার ৬০০ হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি, তারা বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু হামাস সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল ও মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যুদ্ধ করছে।
ওএফ