Logo

আন্তর্জাতিক

গাজার ৭৫ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে আসবে : সেনাপ্রধান

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১৭:২৪

গাজার ৭৫ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে আসবে : সেনাপ্রধান

আইডিএফ চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির (বামে) গাজায় দক্ষিণ কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল ইয়ানিভ আসরের সাথে বৈঠক করেন/ ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সামরিক অভিযানের বর্তমান ধাপ খুব শীঘ্রই সরকার নির্ধারিত সীমারেখায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির। এর ফলে পুরো গাজা উপত্যকার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি সেনাদের হাতে চলে আসবে বলে তিনি দাবি করেন।

শুক্রবার ইয়াল জামির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে গাজা সফর করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইরানের সাথে ১২ দিনের যুদ্ধে জয়লাভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি গাজায় ইসরায়েলের লক্ষ্যপূরণে সহায়তা করবে।’ 

জামিরের ভাষায়, ‘ইরান বড় ধাক্কা খেয়েছে। এই আঘাত আমাদের গাজা অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

জানা গেছে, গাজায় হামাসকে দুর্বল করতে এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরানকে কোণঠাসা করার কৌশলই এখন ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য।

আইডিএফের ‘গিদিওন’স চারিয়টস’ নামের এই সামরিক অভিযান মে মাসের মাঝামাঝি শুরু হয়।

জামির বলেন, ‘খুব শীঘ্রই আমরা নির্ধারিত সীমারেখায় পৌঁছে যাব। এরপর রাজনৈতিক নেতাদের সামনে নতুন অভিযানের পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে।’

তিনি বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে যাওয়ার মূল লক্ষ্য দুটি- হামাসকে পরাজিত করা ও সব জিম্মিকে মুক্ত করা।’

বর্তমানে আইডিএফ গাজার ৪০ শতাংশ এলাকা দখলে রেখেছে, যা ধাপে ধাপে ৭৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে পুরো রাফা, খান ইউনিস ও গাজা সিটির উত্তরের শহরগুলো অন্তর্ভুক্ত।

জামির গাজায় দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল ইয়ানিভ আসোর, স্থল বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল নাদাভ লোতান, ৯৯তম ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়োয়াভ ব্রুনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় নতুন করে সামরিক শাসন জারি করা নাকি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি এ নিয়ে সরকারের এখন বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

ইসরায়েলের চ্যানেল-১২ জানিয়েছে, রোববারই জামির এই প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো যুদ্ধ বন্ধের কোনো প্রস্তাব মানতে নারাজ।

চ্যানেল ১২-এর সামরিক বিশ্লেষক নির ডিভোরি বলছেন, ‘ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের পর জামিরের গাজা সফরের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে এখন মূল লক্ষ্য গাজা।’

ডিভোরি আরও জানান, ‘জামির সম্প্রতি রিজার্ভ বাহিনীর একটি ব্রিগেডের জরুরি আদেশ বাতিল করেছেন।’

বিশ্লেষকের মতে, এটি নেতানিয়াহুর প্রতি ইঙ্গিত যে, টানা ২০ মাসের যুদ্ধে সৈন্যরা ক্লান্ত।

চ্যানেল ১২-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু হয়তো প্রথমবারের মতো গাজা যুদ্ধ শেষ করার চিন্তায় যাচ্ছেন। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে সাফল্যের পর নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিচ্ছেন গাজায় ২০ মাসের যুদ্ধ বন্ধ করতে।

ট্রাম্পের নতুন কৌশলে হামাসের সাথে চূড়ান্ত জিম্মি মুক্তি চুক্তি ও যুদ্ধবিরতি হবে। এর বিনিময়ে নতুন কিছু আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে ‘আবরাহাম চুক্তি’-তে যুক্ত হবে। পাশাপাশি ইসরায়েলকে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতিও দিতে হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু হয়তো তার কট্টর ডানপন্থী মিত্রদের ছেড়ে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দিকে যেতে পারেন বলে ইসরায়েলি মিডিয়ায় গুঞ্জন চলছে।

শুক্রবার ইয়েদিয়োথ আহারোনোথ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিন বেতের সাবেক প্রধান রোনেন বার একাধিকবার নেতানিয়াহু ও শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গাজায় যুদ্ধ শেষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

তার যুক্তি ছিল, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তেমন লাভজনক নয়—কারণ যতদিন ফিলিস্তিনিরা থাকবে ততদিন হামাস গাজায় থেকেই যাবে।

তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, হামাসের সাথে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি করে সব জিম্মি মুক্তির ব্যবস্থা করা। পরে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে হামাসকে কঠোর জবাব দেওয়া। তবে নেতানিয়াহু এই পথে না গিয়ে ধাপে ধাপে চুক্তির পক্ষে ছিলেন, যেখানে হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে এবং তাদের শীর্ষ নেতাদের নির্বাসনে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য সমালোচনা ও বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণার পর রোনেন বার এই মাসের শুরুর দিকে পদত্যাগ করেন।

অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন চারটি স্থানে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে। তবে এসব কেন্দ্রের কাছে হামলায় বহু বেসামরিক হতাহতের খবর নিয়মিত উঠে আসছে, যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে।

এর আগে ২ মার্চ যুদ্ধবিরতি-জিম্মি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং ১৮ মার্চ থেকে পূর্ণমাত্রায় নতুন হামলা শুরু হয়।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গাজা ইসরায়েল

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর