Logo

আন্তর্জাতিক

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে : ইরানি মন্ত্রী

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১০:৪৮

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে : ইরানি মন্ত্রী

ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানছি। ছবি : সংগৃহীত

ইরান বলেছে কূটনৈতিক আলোচনা আবার শুরু করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ওপর নতুন করে হামলার চিন্তা বাতিল করতে হবে। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানছি এ কথা বলেছেন।

সোমবার (৩০ জুন) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এক সাক্ষাৎকারে মাজিদ তাখত-রাভানছি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে জানিয়েছে যে তারা আলোচনায় ফিরতে চায়। কিন্তু আলোচনা চলাকালে নতুন করে হামলার মতো ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে’ যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।

ইরানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিলো গত ১৩ জুন। ওমানের রাজধানী মাস্কটে তার দুদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার আলোচনায় বসার কথা ছিলো।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র পরে নিজেই সরাসরি জড়িয়ে পড়ে এবং ইরানের কয়েকটি পরমাণু স্থাপনায় বোমা হামলা করে মার্কিন বামারু বিমান।

তাখত-রাভানছি বলছেন, ইরান শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সক্ষম। তিনি গোপনে ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি বলেন, গবেষণা কর্মসূচির জন্য ইউরেনিয়াম সামগ্রীতে প্রবেশাধিকার পায়নি বলেই ইরানকে নিজের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।

‘কোন মাত্রায় থাকবে বা কতটা সক্ষমতা থাকবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তোমার সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থাকবে না, শূন্য মাত্রায় থাকবে এবং তুমি একমত না হলে তোমার ওপর বোমা মারবো-এগুলো জঙ্গলের আইন।’

ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার পাশাপাশি দেশটির বেশ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। তাদের অভিযোগ ছিল তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।

ইরান এর জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আর ১২ দিনের এই সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পরমাণু স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বললেও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ'র প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় মারাত্মক ক্ষতি হলেও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।

গ্রসি বলেছেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারবে।

কিন্তু ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী তাখত-রাভানছি বলেছেন, এ বিষয়ে তার জানা নেই।

গত বুধবার ইরানের পার্লামেন্ট আইএইএ'র সাথে সহযোগিতা স্থগিত করার প্রস্তাব পাশ করেছে। তাদের অভিযোগ সংস্থাটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ঘেঁষা।

ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে এমন তথ্য গোয়েন্দারা পেলে তিনি ইরানের ওপর বোমা হামলার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

ওদিকে, ট্রাম্প চলতি সপ্তাহেই ইরানের সাথে আলোচনায় বসার কথা বললেও, ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন আলোচনায় ফেরার কোনো তারিখ ঠিক হয়নি এবং এ আলোচনার অ্যাজেন্ডা কী হবে তাও তিনি জানেন না।

তিনি বলেন এখন তারা একটি প্রশ্নের উত্তর চাইছেন: "আমরা যখন আলোচনায় থাকবো তখন কি আবার হামলার পুনরাবৃত্তি হবে?"

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে।

নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি বা বিনিয়োগের পরিবর্তে ইরান কোনো সমঝোতায় যাবে- এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘কেন আমরা এ ধরনের প্রস্তাবে সম্মত হবো?’

তিনি আবারো জোর দিয়ে বলেন যে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার।

২১০৫ সালের চুক্তি ইরানকে বাণিজ্যিক পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রা পর্যন্ত সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

একইসঙ্গে ফোর্দোতে ১৫ বছরের জন্য সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার কথা ছিলো। পরে ২০১৮ সালে ট্রাম্প এ চুক্তি বাতিল করে নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।

ইরান ২০২১ সালে আবার ফোর্দোতে সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করে। আইএইএ এর মতে ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করেছে- যা দিয়ে নয়টি পরমাণু বোমা তৈরি সম্ভব।

তাখত রাভানছি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি হামলার 'হাস্যকর অনুমোদন' দেয়ার জন্য কয়েকজন ইউরোপিয়ান নেতার সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, পরমাণু কর্মসূচির জন্য যারা ইরানের সমালোচনা করে তাদের 'বরং ইরানকে কীভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে তার সমালোচনা করা উচিত' এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনা করা উচিত।

‘তাদের যদি আমেরিকাকে সমালোচনার সাহস না থাকে তাহলে চুপ থাকা উচিত, আগ্রাসনের যৌক্তিকতা খোঁজা উচিত না।’

তাখত-রাভানছি বলেন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরান এই বার্তা পেয়েছে যে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনিকে টার্গেট করে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সরকার পরিবর্তন চায়নি।

তিনি বলেন, কিছু ইরানি সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রমের সমালোচনা করলেও যখন বিদেশি আগ্রাসনের বিষয় আসে তখন সবাই এক হয়ে লড়াই করে।

উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরানের সাথে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হয় কি-না তা পরিষ্কার নয়, তবে ইরান কোনো হামলা না আসরে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রেখে পর্যবেক্ষণ করবে।

তিনি বলেন ইরানের আরব সহযোগীরা আলোচনার পরিবেশ তৈরির জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা আলোচনা ও কূটনীতি চাই। কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে এবং আবারো নতুন করে বিস্মিত হওয়া যাবে না।’

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর