যুক্তরাষ্ট্রে আকস্মিক বন্যায় ১৫ শিশুসহ নিহত ৪৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১১:৩১

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় বেঁচে থাকা মানুষদের উদ্ধারে শত শত উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৫ শিশুসহ মারা গেছে অন্তত ৪৩ জন।
কের কাউন্টির শেরিফ ল্যারি লেইথা বলেন, ‘প্রত্যেককে না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চলমান আছে ও চলবে।’
কাউন্টি কর্মকর্তারা জানান, নদীর কাছে ক্রিশ্চিয়ান ইয়ুথ ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ হওয়া ২৭টি শিশুকে এখনো পাওয়া যায়নি।
কিছু অভিভাবক সামাজিক মাধ্যমে বার্তা দিয়ে তাদের শিশুদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এখন পর্যন্ত ৮৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ওদিকে সপ্তাহের শেষে আর কয়েকটি আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৬ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট বলেন, উদ্ধার অভিযান আরও জোরদার করতে তিনি একটি দুর্যোগ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি বলেন, কর্মকর্তারা এ ঘটনার শিকার প্রতিটি ব্যক্তির অবস্থান খুঁজে পেতে বিরামহীন কাজ করে যাবেন।
তারা জানিয়েছেন, গুয়াডালুপে নদীর উপর নীচে সবদিকেই উদ্ধারকারীরা যাবেন যাতে করে কেউ যদি বন্যার পানিতে ভেসে যায় তাকেও যেন উদ্ধার করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতার জন্য ফেডারেল সরকার কোস্ট গার্ড মোতায়েন করবে।
ওদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, মধ্য টেক্সাসে সপ্তাহের শেষে আবারো বন্যা হতে পারে। এতে করে ৫-১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। এর আগে শুক্রবারের বৃষ্টির কারণেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই এলাকার মানুষ।
বিপর্যস্ত ক্যাম্প
বেশিরভাগ উদ্ধার কর্মীদেরই দৃষ্টি ছিলো ক্যাম্প মিসটিক এর দিকে। এটি মেয়েদের একটি বড় আকারের ক্রিশ্চিয়ান সামার ক্যাম্প।
টেক্সাস লেফটেন্যান্ট গভর্নর ডান প্যাট্টিক বিবিসি রেডিও ফোরের অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, ২৭ জন এখনো নিখোঁজ আছে, তাদের অনেকেরই বয়স ১২ বছরের কম।
ক্যাম্পের যেসব ছবি এসেছে, তাতে এর ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে। কম্বল, ম্যাট্টেস, টেডি বিয়ারসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি কাদায় ভরে আছে।
শুক্রবার নিকটবর্তী নদীর পানি যখন এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ২৬ ফুট উঁচু হয়ে গিয়েছিলো তখন তাদের অনেকেই ঘুমাচ্ছিলো।
ওই ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে সাতশ জন ছিলো। যারা মারা গেছে বা নিখোঁজ আছে, তাদের জন্য রবিবার চার্চে প্রার্থনা হবে।
৪ জুলাইয়ের ছুটি উপলক্ষেও ক্যাম্পাররা অনেকে এসেছিলো ওই ক্যাম্পে। তাদেরও অনেকের খোঁজ নেই।
লোরেনা গিলেনের বাড়ি ও রেস্তোরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি জানান ২৮টি যানবাহনে করে লোকজন এসেছিলো এবং এসব যানবাহন নদীর কাছে তার জায়গায় রাখা হয়েছিলো।
তিনি জানিয়েছেন যে পাঁচজনের একটি পরিবারের চিৎকার তিনি শুনতে পেয়েছেন। ‘তারা ভেসে যাচ্ছিলো। তারা বাঁচার জন্য গাছ আঁকড়ে ধরেছিলো। কিন্তু উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি’।
এটা আমিও হতে পারতাম
তিনি বলেন, ‘ওই ক্যাম্পারদের (যারা ক্যাম্পে এসেছিলেন) বাবা ভয়াবহ দু:স্বপ্নের মধ্যে আছে। এটা আমিও হতে পারতাম’।
এদিকে অন্যরা বন্যা দুর্গত এলাকায় যেতে শুরু করেছেন।
জোনাথন অ্যান্ড ব্রিটানি রোজাস তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে ফাউন্ডেশন ছাড়া আর কিছু নেই।
তারা বলেন, একটি পরিবারের মা ও শিশু নিখোঁজ আছে।কাঁটাতারের সঙ্গে আটকে তাদের কিশোর ছেলে বেঁচে গেছে।
আরেকজন অধিবাসীর নাম অ্যান্থনি। তাকে তার অ্যাপার্টমেন্টে কাদা ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাওয়া গেছে। ছোটবেলার একটি ছবি আর তার কম্বল ছাড়া আর কিছু আর উদ্ধারযোগ্য ছিলো না। তথ্যসূত্র-বিবিসি।
এমবি