Logo

আন্তর্জাতিক

গণতন্ত্র নয়, বাণিজ্যই ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশ নীতিতে অগ্রাধিকার

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৫

গণতন্ত্র নয়, বাণিজ্যই ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশ নীতিতে অগ্রাধিকার

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর বাংলাদেশের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। গণতন্ত্র বা রাষ্ট্রগঠনের সহায়তার জায়গায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ও ভূরাজনৈতিক কৌশলে কেন্দ্রীভূত—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়া কিংবা রাষ্ট্রগঠনে অর্থব্যয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ নিতান্তই কম। এখন তারা ঢাকাকে দেখছে বাণিজ্যিক ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার অংশীদার হিসেবে।’

‘ফরেন পলিসি’ সাময়িকীর উইকলি সাউথ এশিয়া ব্রিফিংয়ে কুগেলম্যান এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালনরত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাম্প্রতিক ফোনালাপে দুই দেশের পক্ষ থেকেই যে বিবরণ প্রকাশ হয়েছে, তাতে স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঢাকার গুরুত্ব এখন ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা কাঠামোয় চীনের প্রভাব মোকাবিলায়।

কুগেলম্যান লিখেছেন, দুই নেতা অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই অঞ্চলের নিরাপত্তার অর্থ মূলত চীনের প্রভাব কমিয়ে আনা, যেখানে বাংলাদেশকে পার্টনার হিসেবে দেখতে চায় ওয়াশিংটন।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন নীতিগত অবস্থান বাংলাদেশের জন্য নতুন সংকটও তৈরি করছে। কুগেলম্যান বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে বাংলাদেশকে ৩৭ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়তে হবে। যা রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।’

এই শুল্ক সংকট মোকাবিলায় গত এপ্রিলে একটি জরুরি বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। পরে অর্থ উপদেষ্টা নতুন শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কাঠামো প্রস্তাব করেন, যার উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গ্রহণযোগ্য বাণিজ্য চুক্তিকে সহজ করা।

আগামী ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে এই ইস্যুতে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের একটি কার্যকর সমাধান আসবে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে যেখানে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ছিল, সেখানে এখন ট্রাম্প প্রশাসন সুস্পষ্টভাবে সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস ফোনালাপ শেষে বলেন, ‘উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে সম্মত হয়েছেন।’

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—চীনের প্রভাব ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক চাপে ভারসাম্য রেখে কীভাবে তার কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণ করবে। গণতন্ত্র নয়, বরং কৌশলগত বাণিজ্যই এখন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

যুক্তরাষ্ট্র ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর