গাজায় লাশের মিছিল থামছেই না, নিহত আরও ৮২ ফিলিস্তিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫০

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) ভোর থেকে টানা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নিহতদের মধ্যে শুধুমাত্র দেনির আল-বালাহ এলাকায় শিশু খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় এক দফা বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন শিশু ও ৪ জন নারী। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। এদের মধ্যেও ১৯ জনই শিশু।
মর্মান্তিক এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের ওপর হামলা একেবারেই অমানবিক। গাজায় বহু শিশু আজ অপুষ্টি ও ক্ষুধার মুখোমুখি। দ্রুত পূর্ণমাত্রায় ত্রাণ কার্যক্রম চালু না হলে দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী।
এ সময় ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে এই ঘটনার তদন্তের দাবিও জানান।
এদিকে হামাস এই হামলাকে ‘গণহত্যার ধারাবাহিকতা’ আখ্যায়িত করে বলছে, স্কুল, রাস্তাঘাট, শরণার্থী শিবিরসহ নিরীহ বেসামরিক জনগণের ওপর যেভাবে একের পর এক হামলা চালানো হচ্ছে, তা একটি সংগঠিত জাতিগত নিধনের জ্বলন্ত উদাহরণ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ৫৭ হাজার ৭৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৬ জনেরও বেশি মানুষ।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চললেও অনিশ্চয়তা কাটেনি
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনা চলছে। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির আওতায় ১০ জন বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। তবে হামাস জানিয়েছে, চুক্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত। এর মধ্যে রয়েছে গাজায় সহায়তার প্রবাহ, যুদ্ধবিরতির সময়সীমা এবং ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমরা ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি চাই, এতে অর্ধেক বন্দি মুক্তি পাবে। এরপর আমরা স্থায়ী যুদ্ধসমাপ্তির বিষয়ে আলোচনা করতে পারি—তবে শর্ত একটাই, হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং গাজা শাসন ছেড়ে দিতে হবে। এটি আলোচনার মাধ্যমে না হলে বলপ্রয়োগে আদায় করা হবে।
এ অবস্থার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বিতর্কিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন, যেখানে দক্ষিণ গাজার রাফাহতে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র তামারা আলরিফাই এ পরিকল্পনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বলেন, রাফাহ সীমান্তে এর ফলে কার্যত এক ধরনের ঘনবসতিপূর্ণ বন্দিশিবির গড়ে উঠবে, যা মানবাধিকারের পরিপন্থী।