Logo

আন্তর্জাতিক

‘জ্বালানি সুইচ বন্ধ’ হওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:৩০

‘জ্বালানি সুইচ বন্ধ’ হওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত

ছবি ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার একটি প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে এর জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। অর্থাৎ জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ যাওয়ার কারণে বিমানটির দুই ইঞ্জিন বন্ধ হয়েছিল।

বিমানটির ককপিটে পাইলটদের কথোপকথনের যে রেকর্ড পাওয়া গেছে তাতে একজনকে বলতে শোনা গেছে ‘তুমি বন্ধ করে দিলে কেন?’। আরেকজন জবাব দিয়েছেন তিনি কিছু করেননি।

এয়ার ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্র বলেছেন তারা বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ‘পরিপূর্ণ সহযোগিতা’ করছেন। খবর বিবিসি’র।

বিমান দুর্ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

গত ১২ই জুন লন্ডনগামী বিমানটি উড্ডয়নের পরপরই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৪২ জন আরোহীর মধ্যে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ছাড়া বাকি সবাই নিহত হন।

আরোহীদের মধ্যে যাত্রী ছিলেন ২৩০ জন, ১২ জন ছিলেন বিমানের ক্রু। সব মিলিয়ে ওই দুর্ঘটনায় ২৬০ জন নিহত হয়েছিলো।

পরদিন থেকেই ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় তদন্ত শুরু করে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে আসে। সেইদিন বিমানটির প্রথম ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়।

দ্বিতীয় ব্ল্যাকবক্সটি পাওয়া যায় ১৬ই জুন যেখানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিলো সেখানকার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। যদিও ঠিক কোন জায়গায় পাওয়া গেছে তা প্রকাশ করা হয়নি।

শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন রুলসের আওতায় প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো।

বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ককপিটে যা হয়েছিল
এএআইবি বিমানটির দুর্ঘটনা বা বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে ১৫ পাতার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পর বিধ্বস্ত হওয়ার আগে যা যা ঘটেছিলো তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

‘বিমানটি উড্ডয়নের পর ১৮০ নটস গতিতে পৌঁছে গিয়েছিলো এবং এর পরপরই এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি ইঞ্জিনেরই ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ 'রান থেকে কাট অফ' পজিশনে চলে যায়,’ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে।

‘ককপিটে পাইলটদের কথোপকথনের ভয়েস রেকর্ডিং, একজন পাইলটকে জিজ্ঞেস করতে শোনা যায় যে তিনি কেন সুইচ বন্ধ করলেন। অন্য পাইলট বলেছেন তিনি এমন কিছু করেননি’।

আন্তর্জাতিক সময়ানুযায়ী ৮টা ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের সময় ‘১ নম্বর ইঞ্জিন এর ফুয়েল কাট অফ সুইচ আবার 'রান' (চালু) অবস্থায় ফিরে আসে এবং এর ৪ সেকেন্ড পর দুই নম্বর ইঞ্জিনের ফুয়েল কাটঅফ সুইচও 'কাট অফ থেকে রান' অবস্থায় ফিরে আসে’।

কিন্তু ৮টা ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ডে, অর্থাৎ নয় সেকেন্ডের ব্যবধানে, একজন পাইলট গ্রাউন্ডে থাকা এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের ‘মে ডে’ ‘মে ডে’ ‘মে ডে’ বলে বার্তা দেন।

প্রসঙ্গত, ‘মে ডে’ একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বিপদ সংকেত। সাধারণ পাইলটরা সংকটের মুখে পড়লে এয়ার ট্রাফিক কর্মকর্তাদের তিন বার এই বার্তা দিয়ে বোঝান যে বিমানটি মারাত্মক সংকটে পড়েছে ও তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন।

জ্বালানি নমুনা ‘সন্তোষজনক’
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলোর জন্য যেখান থেকে জ্বালানি নেয়া হয় সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা পাওয়া গেছে তা ‘সন্তোষজনক’

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা এর আগে বিবিসিকে বলেছিলেন যে, "বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য জ্বালানি দূষণও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। এছাড়া জ্বালানি দূষণ বা জমাট বেধে যাওয়ার কারণেও ইঞ্জিন ফেইলিওরের ঘটনা ঘটতে পারে"।

বিমানের ইঞ্জিন একটি সুনির্দিষ্ট জ্বালানি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়- এই সিস্টেম বা পদ্ধতির বাধাগ্রস্ত হলে এটি জ্বালানি শূন্যতার সৃষ্টি করে এবং এর ফলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।

পাইলট ও ক্রুরা ফিট ছিলেন
এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ এর ক্রু ও দুই পাইলট বিমান পরিচালনায় সক্ষম ছিলেন কি-না সেটি নিশ্চিত করতে নিয়মানুযায়ী যথাযথ পরীক্ষা করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুম্বাই ভিত্তিক উভয় পাইলট আহমেদাবাদে এসেছিলেন এক দিন আগে এবং তারা ‘বিশ্রামের যথাযথ সময়’ পেয়েছিলেন।

ক্রু ও পাইলটদের শ্বাসনালীর পরীক্ষাও হয়েছিলো স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে এবং তাদের বিমান চালনার জন্য উপযুক্ত পাওয়া গিয়েছিলো বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন বা ডিজিসিএ’র তথ্য, বিমানটির পাইলট ‘ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল একজন এলটিসি ছিলেন। তার ৮২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। কো-পাইলটের ১১০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল।’

এলটিসির অর্থ হল লাইন ট্রেনিং ক্যাপ্টেন, অর্থাৎ তিনি অন্য পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতেন।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিমান দুর্ঘটনা ভারত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর