Logo

আন্তর্জাতিক

দিল্লিতে বাংলাভাষী মুসলমানদের আটক করে নির্যাতন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১৮:১৭

দিল্লিতে বাংলাভাষী মুসলমানদের আটক করে নির্যাতন

দিল্লিতে বাংলাভাষী মুসলমানদের আটক করে নির্যাতন। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের রাজধানী দিল্লি লাগোয়া হরিয়ানার শহর গুরুগ্রামে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ছয়জন বাসিন্দাকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ, এমনই অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার। খরব বিবিসি’র।

এ ছয়জনই পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা। তাদের ধর্মীয় পরিচয় মুসলমান। তারা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। সাত-আট বছর ধরে তারা গুরুগ্রামে থাকতেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি সংগঠন।

তাদের কাছে গুরুগ্রাম পুলিশ ওই ছয়জন আটক হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে বিবিসিকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি গুরুগ্রাম পুলিশ।

এ ছয়জন আটক হওয়ার ব্যাপারে মালদা জেলার যুগ্ম শ্রম কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে।

হরিয়ানার এ ঘটনা এমনই দিনে সামনে এসেছে, যেদিন কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী অভিযোগ করেছেন যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপরে নির্যাতন হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

দিল্লি, উত্তরপ্রদেশে, গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশা রাজ্যে গত কয়েক মাস ধরে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে বহু বাংলাভাষীকে আটক করা হচ্ছে। যারা আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।

আবার ভারতের বেশ কয়েকজনকে বাংলাদেশে ‘পুশ’ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে – এমন একাধিক ঘটনাও সামনে এসেছে।

তবে এমন বহু মানুষকেও আটক করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা প্রকৃতই বাংলাদেশ থেকে এসে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন।

পরিচয় যাচাইয়ের নামে ‘আটক’
পশ্চিমবঙ্গের যে বাসিন্দাদের গুরুগ্রামে আটক করা হয়েছে। তারা মালদা জেলার চাঁচল – এক নম্বর ব্লকের বাসিন্দা বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার।

গত শুক্রবার রাতে সাদা পোশাকের পুলিশ তাদের ঘরে এসে পরিচয়পত্র যাচাই করতে আসে বলে জানাচ্ছেন ধৃতদের এক আত্মীয় মামনি খাতুন।

তার কথায়, ‘যাদের আটক করেছে, তার মধ্যে আমার দুই মামা আর দুই দাদা আছে। সেদিন রাতে তখন কারও খাওয়া হয়ে গিয়েছিল, কেউ খেতে বসেছিল। সাদা পোশাকের পুলিশ এসে আমাদের আধার কার্ড দেখতে চায়। এরপরে তারা বলে যে থানায় যেতে হবে আঙুলের ছাপ নেবে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দেবে – এই আশ্বাস দিয়ে গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে চলে যায়।’

তিনি বলেন, তাদের অবশ্য সোমবার পর্যন্তও ছেড়ে দেওয়া হয়নি। প্রাথমিকভাবে গুরুগ্রামের সেক্টর ১০-এ থানার পুলিশ তাদের আটক করেছিল। পরের দিন তাদের বাদশাহপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মিজ খাতুন।

মামনি খাতুন আরও বলেন, ‘আমরা রোববার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই থানায় ছিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। একবার ওদের নিয়ে গেল মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে বলে। কোথায় যে নিয়ে গেছে, তা বলেনি। রাত পর্যন্ত তাদের তো ওই থানায় ফেরত আনেনি।’

‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ -এর সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলছিলেন, ‘পুলিশ আমার কাছে মেনে নিয়েছে যে ওই ছয়জনকে তারা আটক করেছে। আমি রবিবার বাদশাহপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনারকে ফোন করেছিলাম। তিনি অবশ্য এটাও বলেছেন যে ওদের গ্রেফতার করা হয়নি।’

বিবিসি বাদশাহপুর থানার ওসি, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং তারও ঊর্ধ্বতন অফিসর ডেপুটি কমিশনারকে একাধিকবার ফোন করার চেষ্টা করেছে। তবে বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে।

শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ
ধৃতদের আত্মীয় মামনি খাতুন ও পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের আসিফ ফারুক দুজনেই জানিয়েছেন যে ধৃতদের ওপরে শারীরিক নির্যাতন হচ্ছে।

মামনি খাতুন বলেন, ‘আমার আত্মীয়দের একজনের কাছে ফোন আছে। চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হওয়ার আগে দু একবার কথা বলতে পেরেছি। ওদের মারধর করা হয়েছে আর দিনে একবার মাত্র খেতে দিয়েছে।’

এছাড়াও থানার নানা কাজ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ এসেছে।

আসিফ ফারুক বলেন, ‘পুলিশ কর্মীদের পোশাক কাচা, থানা পরিষ্কার করা ইত্যাদি করা হচ্ছে। এক তো আটক করে রাখা হয়েছে বেআইনিভাবে, তারওপরে আটক হওয়া ব্যক্তিদের দিয়ে এসব কাজ করানো তো আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি মালদায় শ্রম দফতরের যুগ্ম কমিশনারকে চিঠি লিখে জানিয়েছি। এতে যাতে রাজ্য সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এবং ধৃতদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করে, সেই অনুরোধ জানিয়েছি। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে এদেরকেও না বাংলাদেশে পুশ-আউট করে দেয়। সেটা যাতে আটকানো যায়, সেজন্যই সরকারি স্তরে চিঠি দিয়ে জানিয়ে রাখলাম।’

হরিয়ানার গুরুগ্রামে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের বাড়ি যে জেলায়, সেই মালদারই অন্য ছয়জন বাসিন্দাকে সম্প্রতি পাঞ্জাবে আটক করেছে সেরাজ্যের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের মধ্যেই রয়েছে গোহত্যারও অভিযোগ।

পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ বলছে যে এই ছয়জনের বিরুদ্ধে দোসরা জুলাই একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এরা সবাই একটি পোলট্রি ফার্মে কাজ করতেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন 'ঐক্য মঞ্চ'-এর নেতা আসিফ ফারুক।

এরা এখন কাপুরথালা জেলে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

তার কথায়, ‘এরা খুবই গরীব, শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিল পাঞ্জাবে। মামলা লড়ারও ক্ষমতা নেই এদের।’

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যান পর্ষদের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম বিবিসিকে জানিয়েছেন যে পাঞ্জাবে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের জন্য তারা আইনি সহায়তা দিচ্ছেন।

মমতা ব্যানার্জীর অভিযোগ
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের এক সমাবেশে দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জী সোমবার আবারও অভিযোগ করেছেন যে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ বলে সন্দেহ করে হেনস্থা করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাসিন্দাকে নানা রাজ্যে আটক করা হচ্ছে এবং বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

কেন্দ্র ও বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যকে নিশানা করেন মমতা ব্যানার্জী।

তার প্রশ্ন, বাংলা ভাষার ওপর সন্ত্রাস চলছে কেন?

‘বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয় এই লড়াই কিন্তু দিল্লিতে হবে। আমি কিন্তু ছাড়ার লোক নেই। মনে আছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কথা? দরকারে আবার ভাষা আন্দোলন শুরু হবে’, ঘোষণা করেন মমতা ব্যানার্জী।

তার ঘোষণা, ‘২৭ জুলাই নানুর দিবস থেকে প্রতি শনি ও রোববার বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে মিটিং-মিছিল করুন। প্রতিবাদে নামুন। এ বার শুরু হল ভাষা-রক্ষার শপথ।’

এই ইস্যুটি নিয়ে যে পরের বছরের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত তার দল সক্রিয় থাকবে, সেটাও স্পষ্ট করেই ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জী।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ভারত পশ্চিমবঙ্গ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর