Logo

আন্তর্জাতিক

গাজার এক তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েকদিন ধরে অভুক্ত

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৫

গাজার এক তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েকদিন ধরে অভুক্ত

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছে।

‘অপুষ্টি বেড়েই চলেছে। নব্বই হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা দরকার।’ ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে এসব জানিয়েছে। খবর বিবিসি’র।

গাজায় চলতি সপ্তাহে অনাহারের সতর্কতা আরও জোরদার হয়েছে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) অপুষ্টিতে ভোগা নয় জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ১২২ জন।

গাজার সব সরবরাহ প্রবেশ পথের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েল বলেছে সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তারা অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করেছে।

শুক্রবার ইসরায়েলের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, বিমান থেকে সাহায্য বিতরণের অনুমতি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেওয়া হতে পারে। এভাবে সাহায্য দেওয়াকে যথেষ্ট নয় বলে সাহায্য সংস্থাগুলো আগে সতর্ক করেছিল।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান এবার এভাবে সাহায্য দিতে পারে। জর্ডানের একজন কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসিকে বলেছেন, তারা এখনো ইসরায়েলের কাছ থেকে অনুমতি পায়নি।

এ উদ্যোগ এমন সময় নেওয়া হলো যখন গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে।

শুক্রবার জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য অবিলম্বে সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় অবসানের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে।

‘বেসামরিক জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়াটা অগ্রহণযোগ্য’, বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকের মধ্যে যে পরিমাণ মতভিন্নতা, উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে-সহানুভূতি, সত্যতা ও মানবিকতার অভাব- তার মাত্রা তিনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, গত ২৭ মে থেকে খাদ্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা করার সময় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের নেতৃত্ব খাদ্য বিতরণের বিকল্প হিসেবে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ খাদ্য বিতরণ করতে শুরু করে, তখন থেকে এসব ঘটছে।

জিএইচএফ এর সাথে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক একজন ঠিকাদার অ্যান্থনি আগুইলার বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি প্রশ্নহীনভাবেই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতে দেখেছেন।’

তিনি জানান, তিনি দেখেছেন যে আইডিএফ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গোলাবারুদ, মর্টার ব্যবহার করছে এবং খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ট্যাংক থেকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করছে।

অবসরপ্রাপ্ত এই সৈনিক বলেন, ‘আমার পুরো ক্যারিয়ারে এমন মাত্রার নিষ্ঠুরতা দেখিনি। আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ও অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ দেখেছি।’

জিএইচএফ দাবি করছে যে, এসব অভিযোগ একজন ক্ষুব্ধ সাবেক ঠিকাদারের কাছ থেকে এসেছে, যাকে অসদাচরণের অভিযোগে এক মাস আগে বাদ দেয়া হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতার আলোচনা থেকে তাদের দল প্রত্যাহার করে নেয়ায় নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা এখনো অনিশ্চিত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হামাস সত্যিকার অর্থে সমঝোতা চায়নি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তারা মরতে চায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হামাস।

হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসি গাজা সংবাদদাতাকে বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন যে আলোচনা একেবারে ভেঙ্গে পড়েনি এবং ইসরায়েলি দল আগামী সপ্তাহে দোহায় ফিরবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা অভিযানে এ পর্যন্ত গাজায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৬৭৬ জনে। আর আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬৫ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রের চাপে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৮ হাজার ৫২৭ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩১ হাজার ৯৩৪ জন।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গাজা ইসরায়েল ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর