রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আবার চড়াও ট্রাম্প, ১০০% শুল্কের হুঁশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৯

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার শিকার দেশ রাশিয়া এখনো ইউক্রেন যুদ্ধে বিপুল জ্বালানি রপ্তানির মাধ্যমে অর্থ জোগান দিয়ে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন চান।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি না হলে ৮ আগস্ট শুক্রবার থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ বা দ্বিতীয় স্তরের শুল্ক আরোপ করা হবে। এর আওতায়, রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির সময় ১০০ শতাংশ কর বসবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কারণ, রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এবং এর প্রধান রপ্তানি পণ্য তেল ও গ্যাস। রাশিয়ার বড় ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত ও তুরস্ক—যারা এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, ‘তারা (এই দেশগুলো) যুদ্ধযন্ত্রকে জ্বালানি দিচ্ছে। আমি এতে খুশি নই।’
বিশেষজ্ঞ কিয়ারন টমকিনস বলেন, রাশিয়ান জ্বালানির ওপর যদি সেকেন্ডারি ট্যারিফ আরোপ করা হয়, তাহলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক জ্বালানি দামে। যদিও ওপেক প্লাস দেশগুলোর অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, তবু রাশিয়ার সরবরাহ কমলে বাজারে সংকট দেখা দেবে।
রাশিয়া ইতোমধ্যে শত শত ‘শ্যাডো ট্যাংকার’ ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ : দামি হয়ে উঠতে পারে আইফোন
রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ক্রেতা দেশ ভারত। ফলে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া সব পণ্যের ওপরই ১০০ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। এতে আইফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম চড়া হয়ে উঠতে পারে। কারণ, অ্যাপল এখন বড় পরিমাণে মোবাইল ফোন উৎপাদনের জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘অযৌক্তিক ও অন্যায্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যেও টানাপড়েন
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা চীন। ট্রাম্প চীনের ওপর সেকেন্ডারি ট্যারিফ আরোপ করলে বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্যের বড় অংশ আসে চীন থেকে। অতিরিক্ত শুল্ক বসলে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্লেষক সাইমন ইভেনেট বলেন, ‘এই ধরনের চাপ চীনকে রাশিয়ার সঙ্গেই আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নয়।’
ইউরোপেও প্রভাব ফেলবে?
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক এখনো রাশিয়ার বড় জ্বালানি ক্রেতা। যদিও ইইউ ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনা করছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউরোপীয় পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করে, তাহলে বিশ্ববাজারে উৎপাদন ও সরবরাহ খরচ বৃদ্ধি পাবে।
রাশিয়ার অর্থনীতি কোন পথে?
২০২৩ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি ৪.৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তবে দেশটির অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, রাশিয়া এখন ‘মন্দার কিনারায়’। যুদ্ধ পরিচালনার ব্যয় মেটাতে বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ এখন আসে তেল ও গ্যাস থেকে। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে দেশটি এখন জিডিপির ৬.৩ শতাংশ ব্যয় করছে, যা স্নায়ুযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের ঘোষিত ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ কার্যকর হলে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
সূত্র : বিবিসি, ব্লুমবার্গ, রয়টার্স
এমএইচএস