Logo

আন্তর্জাতিক

যেসব কারণে পণ্ড হল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি, বহাল ২৫ শতাংশ শুল্ক

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩০

যেসব কারণে পণ্ড হল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি, বহাল ২৫ শতাংশ শুল্ক

ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর পরে পাঁচ দফা আলোচনার পরও শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেল ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বহুল প্রত্যাশিত বাণিজ্য চুক্তি। খবর রয়টার্সের

ভারতীয় বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ কুটনৌতিকরা যখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছিলেন যে, আমদানি পণ্যে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণে দুই দেশ একমত হয়েছে, তখনই আচমকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি না করেই মুখ ঘুরিয়ে নেন জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে। পরে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানির জন্য অনির্দিষ্টকালের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় পণ্যে করা আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে ৬ জন জ্যেষ্ঠ ভারত ও মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, দুই দেশের মধ্যকার চূড়ান্ত পর্যায়ের বাণিজ্য ও ২৫ শতাংশ শুল্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে মূলত ভারতের রাজনৈতিক ভুল, সংকেত হারানো এবং দেশটির নেতাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের অভাবে।

ভারতের উচ্চপদস্থ সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের দিল্লি সফর এবং পরবর্তীতে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের ওয়াশিংটন সফরের পর ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনার গতি তরান্বিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক ছাড় দেয়।

এর মধ্যে অন্যতম ছিল শিল্প পণ্যে শূন্য শুল্ক (যা যুক্তরাষ্ট্রের ভারতে রপ্তানির ৪০ শতাংশ), ধাপে ধাপে গাড়ি ও মদে শুল্ক কমানো, এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতে আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন এতে সন্তুষ্ট হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কিছু অগ্রগতি পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু কোনো পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হয়নি—যেটা আমরা চাইছিলাম।’

অন্যদিকে শুধু ভারত ও রাশিয়ার মধ্যকার তেল ও প্রতিরক্ষা খাতে বাণিজ্য সম্পর্কই কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো? রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যা বলছে-   

ভারতের আত্মবিশ্বাসই কাল?

যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যেই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন। উভয় দেশই ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কেনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ভারত পরে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কঠোর অবস্থান নেয়।

এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, এত বড় বাজারকে (১.৪ বিলিয়নের) যুক্তরাষ্ট্র অবহেলা করতে পারবে না।’

অপর দিকে ট্রাম্প ভেবেছিলেন বড় ধরনের বিনিয়োগ, খোলা বাজার এবং ছাড়ের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতিসহ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে চমকপ্রদ ঘোষণা দেবে। দক্ষিণ কোরিয়া যেমন শেষ মুহূর্তে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক চুক্তি পেলেও, বিনিময়ে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, কৃষিপণ্যে ছাড় ও জ্বালানি আমদানি দ্বিগুণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

মোদি-ট্রাম্পের যোগাযোগের অভাব

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে সরাসরি কোনো ফোনালাপ বা শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়নি। 

মার্কিন এক কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘অন্যান্য দেশদের সাথেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরাসরি কথা না বলেই চুক্তি হয়েছে।’

কিন্তু ভারতীয় সূত্র বলছে, ‘ট্রাম্পের একতরফা চাপ দেওয়ার সম্ভাবনায় মোদি ফোন করতে চাননি। এছাড়া, ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তান বিষয়ে মধ্যস্থতা করার বিতর্কিত মন্তব্যও আলোচনার পরিবেশকে নষ্ট করেছে বলে মনে করছে দিল্লি।’

এক জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কৌশলগতভাবে ভুল করেছি। যখন যুক্তরাষ্ট্র জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ইইউর সঙ্গে চুক্তি করছিল, তখন আমাদের কূটনৈতিক প্রস্তুতি দুর্বল ছিল।’

প্রতিবেদন বলছে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার দ্বার এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। চলতি মাসেই একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল দিল্লি সফরে যাচ্ছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের পক্ষ থেকেও কৃষি ও দুগ্ধ খাতে নতুন করে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনায় থাকবে। আর তেলের ক্ষেত্রে রাশিয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

প্রাক্তন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি মার্ক লিন্সকট বলেন, ‘এখন দরকার প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি ফোনালাপ। এটা একমাত্র পথ—না হলে দুই পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়বে। কিন্তু সঠিক কৌশলে এটা এখনো লাভজনক চুক্তিতে পরিণত করা সম্ভব।’

এর আগে গত ২ এপ্রিলকে 'লিবারেশন ডে' নামে অভিহিত করে বিভিন্ন দেশের ওপর 'প্রতিশোধমূলত' শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত বেশ কয়েকবার পালটেছেন তিনি।

সর্বশেষ ৩১শে জুলাই ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি।

/এএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ভারত যুক্তরাষ্ট্র

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর