Logo

আন্তর্জাতিক

গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:১০

গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। তবে তিনি দীর্ঘমেয়াদে সেখানে শাসন চালাতে চান না। তিনি চান, হামাসের শাসনভার তুলে দিয়ে গাজায় আরব বাহিনী বা অন্য কোনও বেসামরিক গোষ্ঠী নিরাপত্তা ও শাসনভার গ্রহণ করুক। 

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহু বলেন, গাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, হামাসকে সরিয়ে গাজাকে বেসামরিক শাসনের আওতায় আনতেই তারা এই পদক্ষেপ নিতে চায়। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ইসরায়েল গাজাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় না, বরং একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে এবং গাজার শাসনভার হস্তান্তর করবে এমন পক্ষের হাতে যারা ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়।

এই পরিকল্পনার আলোকে গাজায় ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে গাজা শহর দখলের অনুমোদনের খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে তারা পাঁচ দফা নীতিমালা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, জিম্মিদের মুক্তি, গাজা উপত্যকার ওপর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ও বিকল্প বেসামরিক সরকার গঠন।

অন্যদিকে, গাজায় বাস্তুচ্যুতদের এক শিবিরে থাকা ফিলিস্তিনি মাইসা আল-হেইলা বলেন, ‘দখল করার মতো কিছু আর অবশিষ্ট নেই, গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজার মানবিক সংকটের প্রতি সতর্ক করে জানিয়েছে, সম্প্রসারিত সামরিক অভিযান গাজার বেসামরিক জনগণের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক সভায় সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা বলেন, ‘এটি লাখ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং জিম্মিদের জীবন বিপন্ন করবে।’

ইসরায়েলি সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা ও বিরোধী দলের নেতারা গাজার সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনাকে ‘ফাঁদে পা দেওয়া’ হিসেবে দেখছেন এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

হামাসের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনাকে "প্রকাশ্য অভ্যুত্থান" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হামাস কর্মকর্তা ওসামা হামদান আল জাজিরা বলেছেন, গাজায় যেকোনো নতুন বাহিনীকে তারা ‘দখলদার বাহিনী’ হিসেবে গণ্য করবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনার বিষয়ে বিভক্ত। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সাইমন ওয়াল্টার গাজা দখলকে ‘বিশাল ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ইসরায়েলকে এ পথে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেছেন, গাজার পূর্ণ দখল ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্ত, যুক্তরাষ্ট্রের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার পরিকল্পনা নেই।

বর্তমান গাজা যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যাদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন এখনো বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের অবসান, মানবিক সংকটের মসৃণ সমাধান এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ববাসী এখন দৃষ্টিপাত করছেন গাজা উপত্যকার পরিস্থিতির দিকে।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর