
আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই সামাজিক মাধ্যমে এ ঘোষণা দিয়েছেন। পরে ক্রেমলিন থেকেও তা নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর বিবিসি’র।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, দ্বিতীয় সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকের জন্য ট্রাম্পকে রাশিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তবে ইউক্রেন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে হতে পারে- ট্রাম্পের এমন ইঙ্গিত দেওয়ার পরপরই দুই নেতার বৈঠকের ঘোষণা এসেছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প বলেন, ‘তোমরা একটা ভূখণ্ড চাইছো যা নিয়ে সাড়ে তিন বছর লড়াই হচ্ছে। বহু রাশিয়ান মারা গেছে। বহু ইউক্রেনিয়ানও মারা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি খুবই জটিল। আমরা কিছু ফেরত পাবো আর কিছু পরিবর্তন করবো। উভয়ের ভালোর জন্যই কিছু অঞ্চল বিনিময় হবে।’
তবে এ প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারিত আর কিছু তিনি বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির সহযোগী সিবিএস নিউজ আলোচনার সাথে জড়িত সূত্রে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, হোয়াইট হাউজ ইউরোপীয় নেতাদের একটি সমঝোতা গ্রহণ করানোর চেষ্টা করছে যেখানে রাশিয়া পুরো দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। পাশাপাশি ক্রাইমিয়াও তাদের বহাল থাকবে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত সমঝোতা অনুযায়ী খেরসন ও ঝাপরোজ্জিয়া অঞ্চল তারা ছেড়ে দিবে।
এর আগে শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছিলো যে, পুতিন সম্প্রতি ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সাথে মস্কোতে এক বৈঠকে একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা এ ধরনের প্রস্তাবে একমত হবেন কি-না। শান্তির শর্ত নিয়ে ভলোদিমির জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে এখন অনেক দূরত্ব রয়েছে।
জেলেনস্কি আঞ্চলিক ছাড়ের জন্য যে কোনো পূর্বশর্তকে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।
হোয়াইট হাউজের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা অবশ্য সিবিএসকে বলেন, আগামী শুক্রবারের বৈঠকে জেলেনস্কির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ এখনো আছে।
ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন সত্ত্বেও বড় ধরনের বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে মস্কো। তবে তারা এখন ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেন সেখানে রাশিয়াকে পিছু হটাতে পারেনি।
ইস্তান্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন দফার সরাসরি আলোচনা যুদ্ধের অবসানে সফল হয়নি। মস্কোর সামরিক ও রাজনৈতিক শর্তগুলোকে কিয়েভ ও তার মিত্ররা কার্যত ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ হিসেবে বিবেচনা করছে।
রাশিয়ার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের মিলিটারি কমিয়ে আনা ও ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং রাশিয়ার ওপর থাকা পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
মস্কো চায় ইউক্রেনের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে যে চারটি অঞ্চল আংশিক রাশিয়া দখল করে আছে সেখান থেকে কিয়েভ তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করুক।
তবে ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, একটি ত্রিপক্ষীয় শান্তি চুক্তি করার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের আছে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউরোপীয় নেতারা শান্তি চায়, প্রেসিডেন্ট পুতিন, আমার বিশ্বাস শান্তি চান এবং জেলেনস্কি শান্তি চান।’
‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সব পেতে হবে। কারণ তাকে কিছু স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং আমি মনে করি সেজন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করছেন।’
গত মাসে ট্রাম্প বিবিসির কাছে স্বীকার করেছিলেন যে উইটকফের আগের সফরের পর পুতিন তাকে হতাশ করেছিলেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছিলেন। তিনি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে রাশিয়াকে শুক্রবার পর্যন্ত একটি সময় বেধে দিয়েছিলেন।
শুক্রবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আর কিছু বলেনি যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে টেলিফোনে পুতিনের সাথে কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। রাশিয়ার পূর্ণ আগ্রাসনের পর এটাই ছিল দুজনের মধ্যে সরাসরি প্রথম আলাপ।
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সাথে পুতিনের শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০২১ সালে। তখন জেনেভায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেছিলেন জো বাইডেন।
এমবি