Logo

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনকে চুক্তি মানার আহ্বান ট্রাম্পের, প্রক্রিয়া জটিল বলছে জেলেনস্ক

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:২২

ইউক্রেনকে চুক্তি মানার আহ্বান ট্রাম্পের, প্রক্রিয়া জটিল বলছে জেলেনস্ক

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা আরো জটিল হয়ে উঠছে।

তিনি তার ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাশিয়া একের পর এক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করছে, কবে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে তা এখনো জানি না। এটি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করছে।’ খরব বিবিসি’র।

সোমবার (১৮ আগস্ট) জেলেনস্কি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন। এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনীয় নেতাকে শান্তিচুক্তিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানাবেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিনের সাথে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নয়, স্থায়ী শান্তি চুক্তির দিকে যেতে চান।

শুক্রবার আলাস্কায় পুতিনের সাথে বৈঠকের পর ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ এ লিখেছেন, ‘এটি হবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে ভাল উপায়। কারণ, যুদ্ধবিরতি কোন স্থায়ী সমাধান নয়’।

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের পর জেলেনস্কিকে ফোন করে প্রকৃত ও স্থায়ী শান্তি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আগুন থামাতে হবে, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে’।

পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি মস্কোর সঙ্গে টেকসই ও নির্ভরযোগ্য শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো তুলে ধরেন।

যার মধ্যে রয়েছে- বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং ক্রেমলিন কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চল থেকে অপহৃত শিশুদের মুক্তি দেওয়া।

ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যুদ্ধের স্থায়ী অবসান নিয়ে তার অবস্থানের বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। কেননা, আলাস্কা বৈঠকের আগেই তিনি বলেছিলেন, তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতি চান।

বরাবরই ইউক্রেনের প্রধান দাবি ছিল দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও পরে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিয়ে আলোচনা। আর ট্রাম্পও ইউরোপীয় নেতাদের আগেই জানিয়েছিলেন যে, তার লক্ষ্য হচ্ছে শীর্ষ বৈঠকে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা।

পুতিন ট্রাম্পকে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে ডনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া জাপোরিঝিয়া ও খেরাসনের সম্মুখভাগে যুদ্ধ স্থগিত করবে।

রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অবৈধভাবে দখল করে নেয়। পরে আট বছর পর পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু করে। তারা ডনবাসকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে এবং বর্তমানে লুহানস্কের বেশিরভাগ অংশ এবং দোনেৎস্কর ৭০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই বলেছিলেন, যে কোনো শান্তিচুক্তিতে 'অঞ্চলের বিনিময়ের বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে। বৈঠকের পর ট্রাম্প ফোনে সেই প্রস্তাব জেলেনস্কির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

মাত্র কয়েকদিন আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস ইউক্রেন হস্তান্তর করবে না। কেননা পরবর্তীতে এটিকেই আগ্রাসনের জন্য ব্যবহার করতে পারে।

বিবিসির অংশীদার সিবিএস কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ইউরোপীয় কূটনীতিকরা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প সোমবার জেলেনস্কিকে চাপে ফেলতে পারেন, যাতে তিনি বৈঠকে আলোচিত শর্তগুলো মেনে নেন।

সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতাদের ফোন করে বলেন, পুতিন ‘কিছু ছাড়’ দিতে রাজি। তবে তিনি বিস্তারিত জানাননি।

শুক্রবারের বৈঠকের পর ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ইউক্রেনীয় নেতার জন্য তার পরামর্শ কী? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘চুক্তি করুন’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘রাশিয়া একটি বড় শক্তি, তারা নয়।’

পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে রাজি না হলে ট্রাম্প এর আগে ‘খুব কঠিন পরিণতির’ হুমকি দিয়েছিলেন।

গত মাসে তিনি মস্কোর জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতিতে না গেলে কঠোর নতুন নিষেধাজ্ঞা, এমনকি অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।

শুক্রবারের বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বড় চুক্তি ঘোষণা হয়নি। তবে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, অগ্রগতি হয়েছে।

শনিবার পুতিন বৈঠককে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পকে রাশিয়ার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা সুযোগ পেয়েছি এই সঙ্কটের মূল কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করার। এই মূল কারণগুলো নির্মূল করাই সমাধানের ভিত্তি হওয়া উচিত।’

পরে এক জ্যেষ্ঠ রাশিয়ান কূটনীতিক বিবিসি নিউসআওয়ারকে বলেন, আলাস্কার এই বৈঠক যুদ্ধ বন্ধের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।’

জাতিসংঘে রাশিয়ার প্রথম উপস্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, যারা শান্তি চান তাদের সবারই এই বৈঠকের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া উচিত।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন সহ ইউরোপীয় নেতাদের একটি দল বলেন, ‘পরবর্তী পদক্ষেপে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও আলোচনা করা উচিত।’

এই নেতারা বলেন, তারা ইউরোপীয় সমর্থন নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছেন। ‘আমরা রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখতে প্রস্তুত।’ তারা আরও বলেন, ‘নিজেদের ভূখণ্ড নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ইউক্রেনের ব্যাপার। আন্তর্জাতিক সীমানা বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যাবে না।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে আমরা ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শান্তির কাছাকাছি পৌঁছেছি।’

তিনি যোগ করেন, ‘অবশ্যই অগ্রগতি হয়েছে। তবে পরবর্তী ধাপে জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও আলোচনা প্রযোজনা। ইউক্রেনে শান্তির পথ তার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্ধারিত হতে পারে না।’

এদিকে, কিয়েভে ইউক্রেনীয়রা আলাস্কার বৈঠকের ফলাফল নিয়ে অনেকটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন।

পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের ৫০ বছর বয়সী এক প্রবীণ সেনা সের্হি অর্লিক বলেন, ‘আমি বুঝি আলোচনায় হাত মেলাতে হয়, পুতিন এলে সরাসরি তাকে চড় মারা যায় না। কিন্তু এই লাল গালিচা আর হাঁটু গেড়ে থাকা সেনাদের দৃশ্য। এটা ভয়াবহ, এর কোনো মানে নেই।’

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ডোনাল্ড ট্রাম্প

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর