Logo

আন্তর্জাতিক

গাজায় দুর্ভিক্ষ, প্রথমবারের মতো স্বীকার করল জাতিসংঘ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৫৬

গাজায় দুর্ভিক্ষ, প্রথমবারের মতো স্বীকার করল জাতিসংঘ

প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের একটি সংস্থা বলেছে, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত। গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ‘ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর’ মুখোমুখি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা। খবর বিবিসি’র।

খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নজরদারির দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘের সংস্থা দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলছে, গাজায় খাদ্য নিরাপত্তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।

গাজা শহর ও এর আশেপাশের এলাকা দুর্ভিক্ষের কবলে বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।

সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিস এলাকাও ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ শিকার হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণরূপে মানুষের তৈরি এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, আইপিসি নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে না যে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে কি না, তবে তারা এমন বিশ্লেষণ দেয় যা সরকার, সংস্থা ও সংস্থাগুলোকে দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে বিবৃতি বা ঘোষণা জারি করতে সহায়তা করে।

এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে যে, আইপিসির প্রতিবেদন 'মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট'।

তারা বলেছে, তারা আইপিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনের ফলাফল, বিশেষ করে গাজা শহরে দুর্ভিক্ষের দাবি ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করে।

ত্রাণ বিতরণের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলের সামরিক সংস্থা কো-অর্ডিনেশন অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিস বা কোগ্যাট বলেছে, আইপিসির ‘প্রতিবেদনটি মিথ্যা এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের দেওয়া আংশিক, পক্ষপাতদুষ্ট ও ভাসাভাসা তথ্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি’।

এটি আইপিসির মূল্যায়নকে একতরফা বলেও অভিহিত করেছে এবং দাবি করেছে সংস্থাটি ‘গাজায় গৃহীত ব্যাপক মানবিক প্রচেষ্টাকে’ উপেক্ষা করছে।

এই দুর্ভিক্ষ ‘সম্পূর্ণরূপে মানুষের তৈরি’
আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দুর্ভিক্ষ 'সম্পূর্ণরূপে মানুষের তৈরি' এবং এটি 'প্রতিহত করে অবস্থা পাল্টানো' যেতে পারে।

‘বিতর্ক এবং দ্বিধাগ্রস্ততার সময় পার হয়ে গেছে। দুর্ভিক্ষ উপস্থিত। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে’, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আইপিসি হলো জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, সাহায্য গোষ্ঠী ও বিভিন্ন দেশের সরকারের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। কোথাও দুর্ভিক্ষ ঘটছে কিনা তা নির্ধারণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংস্থাটিকে ব্যবহার করে।

তাদের ৫৯-পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ‘কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে একটি তাৎক্ষণিক, ব্যাপক প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন’।

‘আর কোনো বিলম্ব হলে, এমনকি কয়েকদিন দেরি হলেও দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর হার সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে’, এটি যোগ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘের চার সংস্থার যৌথ বিবৃতি 
জাতিসংঘের চারটি সংস্থা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ‘ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যু রোধে নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর’ আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বা এফএও, ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এই যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে "দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে" ২৭১ জন মারা গেছে - যার মধ্যে ১১২ জন শিশুও রয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, ‘যেকোনো মূল্যে দুর্ভিক্ষ বন্ধ করতে হবে’।

এছাড়া ‘গাজা শহরে তীব্র সামরিক আক্রমণের হুমকি এবং সংঘাতের যে কোনো বৃদ্ধি’ বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে বলেও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

যৌথ বিবৃতিতে এই সংস্থাগুলো বলেছে যে গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বিপর্যয়কর গতিতে ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং জুলাই মাসে ১২ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বলে শনাক্ত করা হয়।

‘এই শিশুদের মধ্যে প্রায় চারজনের মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছিল যার স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে’ বলেছে সংস্থাগুলো।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসরায়েল ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ গাজা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর