অফিসে গোপন প্রেমের অভিযোগে নেসলের সিইও বরখাস্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬

বিশ্বখ্যাত খাদ্য ও পানীয়পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেসলে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। সুইস এই বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী লরেন্ট ফ্রেইক্সকে সোমবার আকস্মিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে— একজন অধস্তন কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন প্রেমের সম্পর্ক। খবর- ফ্রান্স ২৪
নেসপ্রেসো কফি ক্যাপসুল ও কিটক্যাট চকোলেট বারের মালিকানাধীন নেসলে এক বিবৃতিতে জানায়, বিষয়টি তাদের ব্যবসায়িক আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। অভ্যন্তরীণ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানির চেয়ারম্যান পল বাল্ক এবং প্রধান স্বাধীন পরিচালক পাবলো ইস্লারের তত্ত্বাবধানে এই তদন্ত চালানো হয়, যেখানে বাইরের আইনজীবীরাও যুক্ত ছিলেন।
বোর্ড দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নেসপ্রেসোর বর্তমান সিইও ফিলিপ নাভ্রাতিলকে নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেয়। বাল্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি ছিল প্রয়োজনীয় একটি সিদ্ধান্ত। নেসলের মূল্যবোধ ও সুশাসন আমাদের প্রতিষ্ঠানের মূল ভিত্তি। আমি লরেন্টকে তাঁর দীর্ঘ সেবার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
লরেন্ট ফ্রেইক্স ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সে নেসলেতে যোগ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ইউরোপীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং সাবপ্রাইম ও ইউরো সংকটের মতো কঠিন সময়ে কোম্পানিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি লাতিন আমেরিকা বিভাগের প্রধান হন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে নেসলের বৈশ্বিক খাদ্য ও গৃহস্থালির পণ্যে ভোক্তাদের ব্যয় বাড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিইও পদে তার সময়কাল ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত।
নেসলের জন্য সময়টা সহজ নয়। গত বছর কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে যায়, যা সুইজারল্যান্ডে উদ্বেগ তৈরি করে। দেশটির পেনশন তহবিলগুলো নেসলের বড় বিনিয়োগকারী। ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরিনা ডগ ফুড, ম্যাগি বুইলন কিউব, গারবার বেবি ফুড ও নেসকুইক।
তবে ফ্রেইক্স বরখাস্ত হওয়ার দিন সুইস স্টক এক্সচেঞ্জে নেসলের শেয়ার ০.১৩ শতাংশ বেড়ে ৭৫.৪৯ সুইস ফ্রাঙ্কে বন্ধ হয়। এর আগে জুলাইয়ের শেষে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছিল— চীনে ভোক্তাদের ব্যয় কমে যাওয়া এবং কোকো ও কফির দাম বাড়ায় এ বছরের প্রথমার্ধে তাদের নিট মুনাফা ১০.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
নতুন সিইও ফিলিপ নাভ্রাতিল ২০০১ সালে নেসলেতে যোগ দেন। মধ্য আমেরিকায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোতে কফি ও পানীয় ব্যবসার নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি নেসক্যাফে ও স্টারবাকস ব্র্যান্ডের জন্য বৈশ্বিক কৌশল ও উদ্ভাবনের দায়িত্বে ছিলেন। গত বছর জুলাইয়ে তিনি নেসপ্রেসোর প্রধান নির্বাহী হন এবং এ বছরের শুরুতে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হন।
সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নাভ্রাতিল বলেছেন, ‘আমি নেসলের কৌশলগত দিকনির্দেশনা ও কার্যকরী পরিকল্পনা পুরোপুরি গ্রহণ করছি। আমরা প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যাব, দক্ষতা বাড়াব এবং কর্মক্ষমতার গতি হারাব না।’
অভ্যন্তরীণ নীতিবিরোধী সম্পর্কের কারণে শীর্ষ নির্বাহীদের বহিষ্কারের ঘটনা বহুজাতিক করপোরেট দুনিয়ায় নতুন নয়। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ জ্বালানি জায়ান্ট বিপির সিইও বার্নার্ড লুনি সহকর্মীদের সঙ্গে অতীত সম্পর্ক প্রকাশ না করায় পদত্যাগে বাধ্য হন। ২০১৯ সালে একই কারণে ম্যাকডোনাল্ডসের প্রধান নির্বাহী স্টিভ ইস্টারব্রুক চাকরি হারান। আর ২০১৮ সালে ইন্টেল সিইও ব্রায়ান ক্রাজানিচ কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নীতি ভঙ্গ করে একজন কর্মচারীর সঙ্গে অতীতের সম্পর্কের কারণে পদ ছাড়েন।
নেসলের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর, কারণ এটি শুধু করপোরেট শৃঙ্খলা নয়, বরং এমন এক সময় ঘটল যখন প্রতিষ্ঠানটি বাজারে ভোক্তাদের আস্থা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন নেতৃত্ব সেই আস্থা পুনর্গঠনে কতটা সফল হয়, তা-ই এখন মূল প্রশ্ন।
এমএইচএস