Logo

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন চুক্তি না মানলে যুদ্ধের হুমকি পুতিনের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১২

ইউক্রেন চুক্তি না মানলে যুদ্ধের হুমকি পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যদি চুক্তি করতে রাজি না হয়, তবে রাশিয়া তার সব উদ্দেশ্য অর্জনে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছে।

চীনে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর এ মন্তব্য করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। যেটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর বিবিসি’র।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ যুদ্ধ অবসানে পুতিনকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাশিয়ার এই নেতা ট্রাম্পের ‘আন্তরিক প্রচেষ্টা’র প্রশংসা করলেও এখন পর্যন্ত ওই পথে যাননি।

যুক্তরাজ্যের ডিফেন্স সেক্রেটারি জন হিলি কিয়েভ সফরের সময় বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প পুতিনকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন এবং তাকে আরও চাপ দেওয়ার সম্ভাবনা উঁড়িয়ে দেননি।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো পুতিনের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে.... এবং ইউক্রেনকে যুদ্ধে টিকে থাকতে অতিরিক্ত সহায়তা দিতে ইচ্ছুক।’

গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সাথে বৈঠক করে তাকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বের করে এনেছেন ট্রাম্প। তিনি পুতিনকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে সাক্ষাতে রাজি করানোর চেষ্টাও করেছিলেন।

বুধবার পুতিন বলেন, ‘আমি কখনো এমন বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেইনি। কিন্তু এর কি কোনো অর্থ আছে? দেখা যাক।’

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের বৈঠকের ফলাফল পেতে হলে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় এবং জেলেনস্কি সবসময়ই মস্কোয় তার সাথে দেখা করতে যেতে পারেন।

তবে জেলেনস্কির মস্কো যাওয়ার বিষয়টি যে ‘অগ্রহণযোগ্য’ তা বোধগম্য বলে দ্রুত উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে বৈঠক করার বিষয়ে পুতিনের অস্বীকৃতিকে রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাড়াতে আহ্বান জানানো একটি উপায় হিসেবে তুলে ধরেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার এ প্রতিবেশী দেশটির ওপর পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরু করে।

এদিকে বুধবার ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার এ নেতা যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে ‘আমার অবস্থান কোথায় জানেন।’

হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে আমার কোনো বার্তা নেই। তিনি আমার অবস্থান জানেন। তিনি কোনো না কোনোভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক বলেন যে ট্রাম্প মস্কোর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেননি।

তার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি এটাকে কোনও পদক্ষেপ বলছেন না? আর আমি এখনো দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ নেইনি।’

বেইজিং এ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক রাশিয়ান নেতা পুতিনের কাছে জানতে চান, ইউক্রেন শিগগিরই শেষ হতে পারে কি না।

জবাবে পুতিন বলেন, ‘পথের শেষে নিশ্চিতভাবেই একটা আলো আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সাধারণ বুদ্ধি থাকলেও এই সংঘাত অবসানে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে একমত হওয়া সম্ভব হবে।’

পুতিন আরও যোগ করেন, ‘যদি না হয় তবে আমাদের সব কাজ সামরিকভাবে সমাধান করতে হবে।’ কিন্তু তিনি জোর দিয়ে এটাও জানান, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল রাশিয়া ছাড়বে না।

রাশিয়ান এ নেতা আবারো দাবি করেন, ইউক্রেন যেন নেটোর সদস্যপদ না চায় এবং জাতিগত রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে তার ভাষায় ‘বৈষম্য’ বন্ধ করে।

এ অভিযোগকে রাশিয়ার আগ্রাসনের অন্যতম অজুহাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

পুতিন ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে শান্তি চুক্তির পর পশ্চিমা দেশগুলো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দনবাস অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, যেটির বাসিন্দারা রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে ভোট দিয়েছিল। যদিও এ ভোট ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনের সঙ্গে পুতিন বেইজিং এ দেখা করেছেন।

পরে কিম জানান উত্তর কোরিয়া ‘ভ্রাতৃপ্রতিম কর্তব্য’ থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ অব্যাহত রাখবে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পুতিন কিমকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠানোর কারণে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে ‘বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যের বিশেষ সম্পর্ক’ বলে বর্ণনা করেন।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ ইউক্রেনের মিত্রদের নিয়ে গঠিত কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং বৈঠক আয়োজন করবেন।

ম্যাঁক্রোর কার্যালয় এলিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, এ জোটের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিশ্চিত করা যাতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বাড়ানো যায়।

একইসাথে রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি আদায় করা যায়।

গত মাসে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প পুতিনকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেন। কিন্তু সম্মেলনের পর তিনি জানান সংঘাত অবসানের জন্য শান্তি চুক্তির পথ খোঁজা হবে আরও কার্যকর উপায়।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন পুতিন এবং ইউরোপীয় শহরগুলোতে হামলা আরও তীব্র করেছে তারা সেনারা।

শুধু বুধবার রাতেই রাশিয়া পাঁচশোর বেশি ড্রোন ও ২৪ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব বিবিসিকে জানান, একবার শান্তি চুক্তি কার্যকর হলে যুক্তরাজ্য এবং ৩০টিরও বেশি দেশ ‘আকাশ, সমুদ্র ও ভূমি নিরাপদ করতে’ সহায়তা করবে।

জন হিলি বলেন, ‘এ সময়ের মধ্যে আমরা এটা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে যুদ্ধের কথা ভুলে গিয়ে শান্তিকে বিপন্ন না করা এবং এ কারণেই আমরা ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বাড়াচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এ কারণেই আজ আমরা রাশিয়ান বাজেয়াপ্ত সম্পদের এক বিলিয়ন পাউন্ডের (এক দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার) সামরিক সহায়তা ও সরঞ্জাম ইউক্রেনে পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছি। পুতিনের নোংরা টাকা সুদসহ ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর