Logo

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে হুন্দাই গাড়ির কারখানায় অভিযান, গ্রেপ্তার ৪৭৫

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১৯

যুক্তরাষ্ট্রে হুন্দাই গাড়ির কারখানায় অভিযান, গ্রেপ্তার ৪৭৫

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানি হুন্দাইয়ের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর কোনো কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অভিযান বলা হচ্ছে এটিকে। খবর বিবিসি’র।

তিন হাজার একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এ কারখানা থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের বেশিরভাগই কোরিয়ান নাগরিক। যেখানে গত এক বছর ধরে কোরিয়ান এ কোম্পানিটি সেখানে বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরির কাজ করছিল।

এ অভিযানের জন্য ‘উদ্বেগ ও ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও নিজেদের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বিবিসিকে জানিয়েছে, ‘বেআইনিভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বন্ধ এবং অন্যান্য গুরুতর ফেডারেল অপরাধের’ অভিযোগের কারণে এজেন্টরা একটি তল্লাশি পরোয়ানা কার্যকর করেছে।

আটলান্টায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্বে থাকা স্পেশাল এজেন্ট স্টিভ শ্রাংক শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটি এমন কোনো অভিবাসন অভিযান ছিল না যেখানে আমাদের এজেন্টরা ওই এলাকায় ঢুকে ঘেরাও করে লোকজনকে ধরে বাসে তুলে ফেলতো। বরং এটি বহু মাস ধরে চলমান একটি তদন্ত।’

শ্রাংক বলেন, ‘এ অপরাধের অনুসন্ধান চালানোর জন্য বিচার বিভাগীয় অনুমতি পেতে আমরা বহু মাস ধরে প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। সাক্ষাৎকার নিয়েছি, নথি সংগ্রহ করেছি। সেই প্রমাণ উপস্থাপন করেছি।’

তিনি এটাও দাবি করেন, ‘কোনো একক সাইট হিসেবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তদন্তের ইতিহাসে বৃহত্তম এক অভিযান ছিল’ হুন্দাইয়ের কারখানায় চালানো এ অভিযান।

এ অভিযান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ অগ্রাধিকার পাওয়া দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্ভাব্য উত্তেজনা বা বিরোধও তৈরি করেছে। আর তা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসন দমন।

এছাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপরও এ ঘটনা চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

শুক্রবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘তারা অবৈধ অভিবাসী ছিল এবং আইসিই (অভিবাসন কর্তৃপক্ষ) কেবল তার কাজ করছিল।’

সিউলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে একজন প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। আমরা একটি দুর্দান্ত, স্থিতিশীল কর্মীবাহিনী চাই।’

‘আর আমার বোধগম্যতা অনুযায়ী, আমাদের অনেক অবৈধ অভিবাসী আছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো মানুষ নন। কিন্তু সেখানে অনেক অবৈধ অভিবাসী কাজ করছিল বলে আমরা দেখতে পেয়েছি।’

‘এরা (কর্মীরা) এমন লোক যারা বাইডেনের মাধ্যমে এসেছে, তারা অবৈধভাবে এসেছে।’

অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ অভিযানে অবৈধভাবে দেশে থাকা বা বেআইনিভাবে কাজ করা প্রায় ৪৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জর্জিয়ার ফোকস্টনে অবস্থিত মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অফিসে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল, যতক্ষণ না সংস্থাটি তাদের পরবর্তী কোনো স্থানে স্থানান্তরিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩০০ জন কোরিয়ান নাগরিকও বলে জানা গেছে।

এক বিবৃতিতে, হুন্দাই মোটর কোম্পানি বলেছে যে তারা ‘পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বোঝার জন্য কাজ করছে। ‘আজ পর্যন্ত, আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি যে আটককৃতদের কেউই সরাসরি হুন্দাইয়ের নিয়োগ করা কর্মী নন,’ এতে বলা হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, এ ঘটনায় বিশাল জায়গা জুড়ে নির্মিত হুন্দাইয়ের বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরির কারখানাটির উৎপাদন প্রভাবিত হয়নি।

তবে ব্যাটারি তৈরির জন্য কারখানাটির যৌথ অংশীদার, দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি এনার্জি সলিউশনস সাইটটিতে নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখেছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে এজেন্টরা কর্মীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে বলছে যে তাদের কাছে কারখানা তল্লাশির জন্য ওয়ারেন্ট আছে। ভিডিওগুলোতে এজেন্টদের কিছু কর্মচারীর সাথে কথা বলতেও দেখা যাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, এ অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় তারা ঘটনাস্থলে তাদের কূটনীতিকদের পাঠাচ্ছেন। কোরিয়ান নাগরিকদের অধিকারের ক্ষেত্রে ‘চরম সতর্কতা অবলম্বন’ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করতে সিউলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানের সময় কোরিয়ান বিনিয়োগ কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং কোরিয়ান নাগরিকদের অধিকার ও স্বার্থ অন্যায়ভাবে লঙ্ঘন করা উচিত নয়।’

এদিক ট্রাম্প বলেআসছেন, অন্যান্য দেশ থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ আনতে কাজ করছেন তিনি। একই সাথে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরিতে নির্মাতাদের উৎসাহিত করছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো আংশিকভাবে শুল্ক এড়াতে আগামী বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

জর্জিয়ার গভর্নর, রিপাবলিকান ব্রায়ান কেম্প, হুন্দাইয়ের নতুন বৈদ্যুতিক যানবাহন পরিচালনাকে রাজ্যের ইতিহাসের বৃহত্তম অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে দাবি করেছিলেন, যেখানে এক হাজার ২০০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছিল।

কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট অবৈধ অভিবাসন দমনের জন্যও প্রচারণা চালিয়েছিলেন, সমর্থকদের বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে অভিবাসীরা আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে।

ক্ষমতায় ফিরে আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচেষ্টা শুরু করেন যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ধরা হচ্ছে। তাদেরকে আটককেন্দ্রে রাখা হচ্ছে। প্রায়শই তাদের নির্বাসিত করা হচ্ছে।

যদিও এ অভিযানে ধরা পড়া অনেকেরই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক রয়েছে। তবুও অন্যান্য জাতীয়তার লোকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

যুক্তরাষ্ট্র

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর