---2025-09-08T191603-68beda1e51860.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে জেনারেশন জেড নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালানোর ঘটনায় সোমবার অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে কাঠমান্ডু, পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরাহাওয়া, ভরতপুর, ইটাহারি ও দামকসহ বিভিন্ন শহরে তরুণ-যুবকরা রাস্তায় নামেন।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমে রাজধানীর নতুন বানেশ্বর এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ দিনভর তীব্র আকার ধারণ করে। কর্তৃপক্ষ বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কারফিউ জারি করলেও তা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চলতে থাকে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুধু কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে ৮ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন এবং ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সুনসারির ইটাহারিতে গুলিবিদ্ধ দুই বিক্ষোভকারীও পরে মারা যান। এতে সারাদেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।
দেশজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ৩৪৭ জন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সিভিল হাসপাতালে ১০০ জন, ট্রমা সেন্টারে ৫৯ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ১০২ জন, কেএমসি-তে ৩৭ জন, বীর হাসপাতালে ৬ জন, পাতান হাসপাতালে ৪ জন, ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১৮ জন, নরভিক হাসপাতালে ৩ জন, বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসে ২ জন, গান্ধাকি মেডিকেল কলেজে ১ জন, বিরাট মেডিকেল কলেজে ৪ জন এবং দামক হাসপাতালে ৭ জন চিকিৎসাধীন।
বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বহু আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এভারেস্ট হাসপাতালের ডা. অনিল অধিকারী জানান, চারজনের অবস্থা গুরুতর। ট্রমা সেন্টারের ডা. দীপেন্দ্র পাণ্ডে জানান, ১০ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন, যাদের মাথা ও বুকে গুলি লেগেছে।
বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে বানেশ্বর এলাকায় ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের সামনে পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও সরাসরি গুলি চালায়। একই ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পোখারা, বিরাটনগর, জনকপুর, হেতৌড়া ও নেপালগঞ্জসহ বড় বড় শহরে।
সুনসারিতে ইটাহারি উপ-মহানগর কার্যালয়ের সামনে একজন বিক্ষোভকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আরেকজন গুরুতর আহত হয়ে বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঝাপায় বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি’র দামকস্থ বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায়। তারা পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।
এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। কমিশন জানায়, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করে এবং ভাঙচুর ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।
মূলত জেনারেশন জেড-এর তরুণ-যুবকদের নেতৃত্বে দুর্নীতি ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। সকালে শুরু হওয়া বিক্ষোভে কাঠমান্ডু ও অন্যান্য শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, যেখানে শিক্ষার্থী ও যুব সংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জেলায় কারফিউ জারি করে এবং যেখানে বিক্ষোভ সবচেয়ে তীব্র সেসব এলাকায় জনসমাবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কাঠমান্ডু ও অন্যান্য শহরের প্রধান মোড়গুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী টহল জোরদার করেছে, আর হাসপাতালে হতাহতদের ভিড়ে চাপ বাড়ছে।
সূত্র : দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট
- এমআই