Logo

আন্তর্জাতিক

শপথ নিলেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী, কী তার পরিচয়?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৫

শপথ নিলেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী, কী তার পরিচয়?

নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেপালের ইতিহাসেরও অংশ হলেন তিনি। খবর বিবিসি’র।

দেশটিতে চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে, জেন-জি আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, মিজ কারকিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করলেন রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পৌডেল।

রাষ্ট্রপতির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা সুরেশ চন্দ্র চালিসে জানিয়েছেন, ‘সংবিধানের চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সুশীলা কারকিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।’

দেশটির শীর্ষ নেতা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

‘জেন জি’ আন্দোলনকারীরা দেশটির প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস উপদেষ্টা কিরণ পোখারেল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী পরিষদের সাথে পরামর্শ করে বাকি কাজ এগিয়ে নেবেন।’

তবে রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মি. চালিসের বক্তব্য অনুসারে,একটা সমঝোতার ভিত্তিতে দেশটির মন্ত্রী পরিষদ গঠন এবং পরবর্তী বৈঠকে সংসদ বা প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

এই বৈঠকে জরুরি অবস্থা এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত না বললেও তিনি জানিয়েছেন, ‘উদ্ভূত অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি এই প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করেছেন।’

রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পৌডেলের নেয়া এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চলমান পরিস্থিতির অবসান ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে নেপালের আন্দোলন-বিক্ষোভের পর, ভার্চুয়াল ভোটের ফলাফলে সুশীলা কারকিকেই মনোনীত করেছিলেন ‘জেন জি’ বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভের সময় ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পরের দিন, সুশীলা কারকি বানেশ্বরের বিক্ষোভস্থলে যান এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের সাথেও দেখা করেন।

বিরাটনগরে নেপালি কংগ্রেসের কৈরালা পরিবারের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক পটভূমিতে জন্ম নেয়া মিজ কারকি বিয়ে করেছিলেন নেপালি কংগ্রেসের তৎকালীন নেতা দুর্গা সুবেদীকে।

মিজ কারকির মতে, একজন আইনজীবী থেকে প্রধান বিচারপতি হওয়ার যাত্রায় তার স্বামীর সমর্থন এবং সততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

তিনিও অবশ্য বিতর্ক থেকে মুক্ত নন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে প্রায় ১১ মাসের মেয়াদে অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন সুশীলা কারকি নিজেও।

আদালত থেকে সরকার প্রধান
নেপালে বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর, দেশটির ৭৫ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে, আনুষ্ঠানিক নিয়োগের মাধ্যমে, প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান) হলেন তিনি।

এমন একটি সময় তিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন, যখন দীর্ঘদিন ধরে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়নি এবং উচ্চ আদালত গঠন সহ প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছিল বিচার বিভাগ।

এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টে মামলার জট বেশি থাকা এবং বিচারকের কম সংখ্যা নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল বিচার বিভাগ।

এমন নানা কারণে সে সময় তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন তার পূর্বসূরিরাও। যদিও কিছু বিতর্ক ছাড়া, তার মেয়াদকাল নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন তোলেননি সাধারণ মানুষ।

কিন্তু এখন, অপ্রত্যাশিত ও অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে তিনিই দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন।

নেপালের বিরাটনগরে জন্ম নেয়া ৭৩ বছর বয়সী এই নারী ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। এরপরই যোগ দেন আইন পেশায়।

বলা হয়, সেই সময়ে একজন নারীর পক্ষে আইন পড়া এবং আইন অনুশীলন করা অস্বাভাবিক ছিল।

বিরাটনগর এবং ধরণে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয়ভাবে ওকালতি করার পর, তিনি সরাসরি বিচারক হিসেবে প্রবেশ করেন সুপ্রিম কোর্টে।

তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রাম প্রসাদ শ্রেষ্ঠা বলেছিলেন যে তিনি সুশীলা কারকির সম্ভাবনা দেখেই তাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন।

নেপালের কংগ্রেস নেতা এবং দেশটির সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী জেপি গুপ্তকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার পর একজন বিচারক হিসেবে আলোচনায় আসেন সুশীলা কারকি।

বিবিসির সাথে আগের এক সাক্ষাৎকারে মিজ কারকি আরও বলেছিলেন যে, তিনি প্রায়শই তার বেঞ্চে দুর্নীতির মামলা শুনানি করেন।

এছাড়া ওই সময় একটি মামলা পুনর্বিবেচনার জন্য তৎকালীন কমিশন ফর দ্য ইনভেস্টিগেশন অফ অ্যাবিউজ অফ অথরিটি (সিআইএএ)-এর প্রধানের দায়ের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সুশীলা কারকি।

পরবর্তীতে তিন বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ, তাঁকে বাদ দিয়ে, লোকমান সিং কার্কিকে পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়।

লোকমান সিং কার্কির ওই মামলা পুনর্বিবেচনার জন্য পুনরুজ্জীবিত করতে সুশীলা কার্কির সিদ্ধান্ত সেই সময়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল।

ওই সময় বৈষম্যের মাধ্যমে নারীর প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অভিযোগও আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে।

বিতর্ক এবং আলোচনা
নেপালের সাবেক ক্ষমতাসীন জোটের (নেপালি কংগ্রেস এবং মাওইস্ট সেন্টার) সংসদ সদস্যরা সংসদে সুশীলা কারকির বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব দাখিল করলে তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।

তবে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে এই অভিশংসন প্রস্তাবকে অকার্যকর ঘোষণা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেছিলেন তৎকালীন বিচারপতি চোলেন্দ্র শমসের রানা।

তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সুযোগ দেওয়া এবং বিচারক নিয়োগের সময় নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এছাড়া খিলরাজ রেগমি প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায়, মন্ত্রী পরিষদের চেয়ারম্যান করার বিষয়েও, সুশীলা কারকি এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কল্যাণ শ্রেষ্ঠা তাদের মতামত জানিয়েছিলেন।

যেখানে রেগমিকে মন্ত্রী পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছিলেন তারা।

ওই সময় এ নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল যে, বর্তমান প্রধান বিচারপতি নির্বাহী শাখার প্রধান হয়ে গেছেন, যা ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের নীতি লঙ্ঘন করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে আলোচনায় আসার পর, সুশীলা কারকির আগের এই সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে, কিছু ব্যাক্তি এখন তার সমালোচনা করেছেন।

কিন্তু কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন যে বর্তমান প্রধান বিচারপতির নির্বাহী বিভাগের প্রধান হওয়া এবং অবসর গ্রহণের পর বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়া এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দেওয়ায় নিজের খ্যাতি কিংবা তাকে নিয়ে বিতর্ক, এই দুইয়ের মধ্যে কঠিন পরিস্থিতিতে আশার আলো হিসেবে কাজ করাই এখন সুশীলা কারকির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ হিসেবেই মনে করা হচ্ছে।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

নেপাল

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর