প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কে উত্তেজনা

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬

প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কে উত্তেজনা। ছবি : বাংলাদেশের খবর
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্কে আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পৃথক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত সমাবেশ দুটি থেকে বিক্ষোভ ও শান্তি কর্মসূচি ঘোষণা করেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণার ফলে প্রবাসীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনন্দ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত সভায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে খুনি-ফ্যাসিস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দলের পক্ষ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। অবৈধ সরকারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
জনগণের টাকায় খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ সমীচীন হবে না। যেখানেই খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বলে উল্লেখ করেন নেতারা।
এদিকে, জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক আগত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈদেশিক বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবীরসহ সফরসঙ্গীদের স্বাগত জানিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে তাৎক্ষণিক মিছিল ও পথসভা করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পতিত স্বৈরাচারের কোনো পাতি নেতার ভয়ঙ্কর রূপ দেখানোর হুমকিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন নেতারা।
জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও প্রধান উপদেষ্টার আবাসিক এলাকায় তারা শান্তি সমাবেশ করবে বলে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে তারা খেয়াল রাখবেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর, জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ড. নকিবুর রহমান ও এনসিপির তাসনিম জারা।
প্রধান উপদেষ্টা বিগত এক বছরে দেশে সংঘটিত সংস্কার ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
এছাড়া আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনরিটিজ ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের সভায়ও অংশ নেবেন।
গত বছর যা ঘটেছিল নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে
২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনন্দ সমাবেশ করে বিএনপি ও একই সঙ্গে বিক্ষোভ সমাবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ওইদিন (নিউইয়র্ক সময়) রাত ১০টা ১০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটটি আট নম্বর টার্মিনালে অবতরণের আগেই বাইরে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা টার্মিনাল এলাকা। ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই জেএফকে বিমানবন্দরে জড়ো হয় প্রধান উপদেষ্টাকে বরণ করতে আসা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। টার্মিনালের আরেক পাশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রতিবাদসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানানোর পর মোটর শোভাযাত্রা সহকারে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ম্যানহাটনের অভিজাত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
কৌশলী ইমা/এমবি