দারিদ্র্য ও জলবায়ু সংকটে পৃথিবীর ১৮ শতাংশ মানুষ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪৪
ছবি : ইউএনডিপি থেকে নেওয়া
বিশ্বের প্রায় ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটি মানুষ, অর্থাৎ পৃথিবীর ১৮ শতাংশ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ভুগছে। এই বিপর্যয়গুলো শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক চাহিদাকেও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্য ও জলবায়ু বিপদের যুগপৎ উপস্থিতি এখন এক বৈশ্বিক মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে।
‘পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ (ওপিএইচআই)-এর যৌথ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৮৮ কোটি ৭ লাখ মানুষ অন্তত একটি জলবায়ু বিপদের সরাসরি শিকার। এর মধ্যে ৬০ কোটি ৮ লাখ মানুষ চরম তাপে, ৫৭ কোটি ৭ লাখ দূষণে, ৪৬ কোটি ৫ লাখ বন্যায় এবং ২০ কোটি ৭ লাখ মানুষ খরায় ভুগছে।
এছাড়া ৬৫ কোটিরও বেশি মানুষ একাধিক জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায় ৩০ কোটির বেশি মানুষ তিন বা চার ধরনের বিপদের সম্মুখীন। এমনকি ১ কোটি ১ লাখ মানুষ এক বছরে চার ধরনের বিপর্যয়েরই মুখোমুখি হয়েছে।
ইউএনডিপি জানিয়েছে, এই দারিদ্র্য সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শিশু মৃত্যুহার, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ ও শিক্ষার মতো মৌলিক মানবিক সূচক। ভুক্তভোগীদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু, যাদের ভবিষ্যৎ জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে।
ইউএনডিপির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হাওলিয়াং শু বলেন, ‘খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ বা বায়ুদূষণের প্রভাব থেকে এখন কেউই নিরাপদ নয়। তবে সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই এর সবচেয়ে কঠিন প্রভাবের শিকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘নভেম্বর মাসে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য (কপ-৩০) জলবায়ু সম্মেলন বিশ্বনেতাদের জন্য এক বড় সুযোগ—যেখানে জলবায়ু পদক্ষেপকে দারিদ্র্য মোকাবিলার নীতির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।’
প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা শহরের বাইরে বসবাসরত গুয়ারানি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য রিকার্ডোর কথা। দিনমজুর রিকার্ডো মাত্র একটি ঘরে ১৮ জন সদস্যের সঙ্গে থাকেন—স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা ও আরও কয়েকজন আত্মীয়সহ। তাদের বাড়িতে একটিমাত্র বাথরুম, কাঠ ও কয়লায় রান্না, আর কোনো শিশুই স্কুলে যায় না।
ইউএনডিপির প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, একাধিক জলবায়ু ঝুঁকি ও দারিদ্র্যের মোকাবিলায় মানুষ ও পৃথিবী উভয়কেই সমান অগ্রাধিকার দিতে হবে। সময় এখন শুধু স্বীকৃতির নয়, বরং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার।
ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির কেন্দ্রবিন্দু
দক্ষিণ এশিয়া এবং সাহারা আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলকে বৈশ্বিকভাবে এই যৌথ সংকটের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুটি অঞ্চলে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যথাক্রমে ৩৮০ মিলিয়ন এবং ৩৪৪ মিলিয়ন। দক্ষিণ এশিয়ায় এই ঝুঁকি প্রায় সর্বব্যাপী; অঞ্চলটির দরিদ্র মানুষের ৯৯.১ শতাংশ (৩৮০ মিলিয়ন) এক বা একাধিক জলবায়ু বিপদের সম্মুখীন, আর ৯১.৬ শতাংশ (৩৫১ মিলিয়ন) একের বেশি বিপদের মুখোমুখি, যা বিশ্বের অন্য কোনও অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় দারিদ্র্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক অগ্রগতি হয়েছে, এখানকার জলবায়ু পদক্ষেপও দ্রুত ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।
আয়ভিত্তিক গোষ্ঠীতে নিম্ন-মধ্যম আয়যুক্ত দেশগুলোতে দরিদ্র মানুষের ওপর জলবায়ু ঝুঁকির বোঝা সবচেয়ে বেশি। মোটসংখ্যা এবং অনুপাত উভয় দিক থেকেই এখানে ঝুঁকি সর্বাধিক। আনুমানিক ৫ কোটি ৪৮ লাখ দরিদ্র মানুষ নিম্ন-মধ্যম আয়যুক্ত দেশে অন্তত একটি জলবায়ু ঝুঁকির সম্মুখীন, যা বিশ্বজুড়ে জলবায়ু ঝুঁকির মুখে থাকা দরিদ্রদের ৬১.৮ শতাংশ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, নিম্ন-মধ্যম আয়যুক্ত দেশের ৪ কোটি ৭০ লাখের বেশি দরিদ্র মানুষ একসঙ্গে দুটি বা তারও বেশি জলবায়ু বিপদের সম্মুখীন।
এএ

