Logo

আন্তর্জাতিক

‘নো কিংস’ আন্দোলন

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিশাল সমাবেশ

Icon

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৮

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিশাল সমাবেশ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মিয়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মিয়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির বিখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন।

রাস্তা ও সাবওয়ে প্রবেশমুখে ভিড় জমে যায় প্রতিবাদকারীদের ব্যানার হাতে, যেখানে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র নয় এবং সংবিধান ঐচ্ছিক নয়’।

বিক্ষোভের আগে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা অভিযোগ করেন, এ আন্দোলনের সঙ্গে বামপন্থী অ্যান্টিফা সংগঠনের যোগ রয়েছে। একে ‘আমেরিকাবিরোধী ঘৃণার র‍্যালি’ বলে আখ্যা দেন।

স্বাধীন লেখক ও সম্পাদক বেট জ্যাসলফ বলেন, তিনি নিউইয়র্কের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন কারণ তিনি ‘ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়া’ দেখে ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

তিনি বলেন, ‘আমি নিউইয়র্ক সিটিকে ভালোবাসি। এখানে এত মানুষকে একসঙ্গে দেখে নতুন করে আশা জাগছে।’

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের কিছু অংশ বিলুপ্ত করেছেন। রাজ্য গভর্নরদের আপত্তি সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ড শহরগুলোতে মোতায়েন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি বাড়িয়েছেন।

এছাড়া তিনি প্রশাসনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার এসব পদক্ষেপ ‘সংকটাপন্ন দেশকে পুনর্গঠনের’ জন্য প্রয়োজনীয় এবং তাকে একনায়ক বা ফ্যাসিবাদী বলা ‘উন্মত্ততা’।

তবে সমালোচকরা সতর্ক করেছেন, প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে।

নিউজার্সির ৬৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ইলেকট্রনিক প্রকৌশলী মাসিমো মাসকোলি। তিনি ইতালিতে বেড়ে উঠেছেন। তিনি জানান, বিক্ষোভে এসেছেন কারণ তার উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইতালির অতীতের পথেই এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি এমন এক ইতালীয় নায়কের ভাতিজা, যিনি মুসোলিনির সেনাবাহিনী ত্যাগ করে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তাকে ফ্যাসিস্টরা নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। আর ৮০ বছর পর আমি যুক্তরাষ্ট্রে আবার সেই ফ্যাসিবাদের ছায়া দেখতে পাবো ভাবিনি।

শনিবারের সব বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা। ‘নো কিংস’ আন্দোলনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অহিংসা তাদের মূল নীতি এবং অংশগ্রহণকারীদের সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্কে ভিড়ের মধ্যে ড্রামবিট, ঘণ্টা আর শব্দযন্ত্রের সঙ্গে একত্রে নিয়মিত স্লোগান উঠছিল ‘এটাই গণতন্ত্রের চেহারা’। ওপরে উড়ছিল হেলিকপ্টার ও ড্রোন, পাশে অবস্থান করছিল পুলিশ।

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, শহরের পাঁচটি বরো মিলিয়ে এক লাখেরও বেশি মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে অংশ নেন এবং কোনো গ্রেপ্তার হয়নি।

টাইমস স্কোয়ারে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শুধুমাত্র ৭ম অ্যাভিনিউতেই ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ মিছিল করেছেন।

মাসিমো মাসকোলি আরও বলেন, তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ অভিবাসন দমননীতি ও স্বাস্থ্যসেবা হ্রাস, যা লক্ষ লক্ষ আমেরিকানের ওপর প্রভাব ফেলবে।

তিনি বিবিসিকে বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের ওপর নির্ভর করতে পারি না। সরকারের ওপরও না। কংগ্রেসের ওপরও না। বিধান, নির্বাহী ও বিচার সবকিছুই এখন আমেরিকান জনগণের বিরুদ্ধে। তাই আমরা লড়ছি।

সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা ও নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট চ্যাক শুমারও বিক্ষোভে যোগ দেন। তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘আমেরিকায় কোনো স্বৈরশাসক নেই। আর ট্রাম্পকে আমরা আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে দেব না।’

তার সঙ্গে তিনি ‘স্বাস্থ্যসেবা সংকট সমাধান করুন’ লেখা একটি পোস্টার হাতে তোলা ছবি শেয়ার করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স মূল বক্তৃতা দেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে আমেরিকাকে ঘৃণা করতে নয়, ভালোবাসতে এসেছি।’ ডিসি মিছিলে বিবিসি এক ব্যক্তিকে দেখেছে যিনি ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে আবার মহান করুন’ টুপি পরে ছিলেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি কেবল দেখতে এসেছেন এবং যদিও পুরো ব্যাপারটি ‘বোঝেন না’, লোকজন তার প্রতি শালীন আচরণ করেছে। যদিও এক নারী তাকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করেন।

বিক্ষোভ কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ইউরোপের বার্লিন, মাদ্রিদ ও রোমেও বিক্ষোভ হয়েছে আমেরিকান প্রতিবাদকারীদের প্রতি সংহতি জানাতে। লন্ডনে কয়েকশো মানুষ মার্কিন দূতাবাসের সামনে সমবেত হন।

কানাডার টরন্টোতেও অনুরূপ দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের সামনে লোকজন ‘কানাডা থেকে হাত সরাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করেন।

শনিবার সম্প্রচারিত হওয়ার আগে ফক্স নিউজে এক সাক্ষাৎকারের প্রচারণা ক্লিপে ট্রাম্প বলেন, ‘একজন রাজা’? এটা কোনো অভিনয় নয়। তারা আমাকে রাজা বলছে। আমি রাজা নই।

রিপাবলিকান সিনেটর রজার মার্শাল সিএনএনকে বলেন, ‘ন্যাশনাল গার্ড পাঠাতে হবে। আশা করি শান্তিপূর্ণ থাকবে, যদিও আমি সন্দেহ করি।’ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান গভর্নররা আগাম ন্যাশনাল গার্ডকে প্রস্তুত রেখেছিলেন।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট বৃহস্পতিবার তার রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড সক্রিয় করেন, দাবি করে যে অস্টিনে ‘অ্যান্টিফা-সংযুক্ত বিক্ষোভ’ পরিকল্পিত হয়েছে।

ডেমোক্র্যাটরা, বিশেষ করে রাজ্যের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিন উ, এর নিন্দা করে বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমনে সশস্ত্র সেনা পাঠানোই রাজা ও স্বৈরশাসকদের কাজ। আর গ্রেগ অ্যাবট প্রমাণ করলেন তিনিও তেমনই একজন।

ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান গভর্নর গ্লেন ইয়াংকিনও রাজ্য ন্যাশনাল গার্ড সক্রিয় করার নির্দেশ দেন। যদিও স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৈন্যরা মিছিলে উপস্থিত ছিল না।

ওয়াশিংটন ডিসিতে আগস্ট থেকে ট্রাম্পের নির্দেশে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন রয়েছে। তবে প্রতিবাদের সময় সেখানে সৈন্য দেখা যায়নি; শুধুমাত্র স্থানীয় পুলিশ ছিল।

রাজধানীর মিছিলে এক প্রতিবাদকারী হাতে ধরে ছিলেন একটি সাইনবোর্ড: ‘আমি অ্যান্টিফা’।

৭৬ বছর বয়সী চাক ইপেস বলেন, এ শব্দটি ‘বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে’। আসলে এর মানে হচ্ছে তিনি ‘শান্তি, শিশুসেবা, ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা, অভিবাসী ও বর্ণবৈচিত্র্যের পক্ষে’।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প সবাইকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তা কাজ করছে না। আমেরিকানরা ট্রাম্পকে নিয়ে গভীরভাবে বিভক্ত।

সাম্প্রতিক রয়টার্স/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪০% আমেরিকান ট্রাম্পের কর্মক্ষমতাকে অনুমোদন করেছেন, ৫৮% অসন্তুষ্ট। এ হার তার প্রথম মেয়াদের গড় জনপ্রিয়তার সমান। তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব নেওয়ার সময়কার ৪৭% অনুমোদনের চেয়ে কম।

সাধারণত সময়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। রয়টার্স/ইপসোস অনুযায়ী, জো বাইডেনের অনুমোদন হার ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৫৫%। যা সেই বছরের অক্টোবর মাসে নেমে আসে ৪৬%-এ।

কৌশলী ইমা/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

যুক্তরাষ্ট্র ডোনাল্ড ট্রাম্প সমাবেশ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর