Logo

আন্তর্জাতিক

জেনেভায় শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭

জেনেভায় শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে জেনেভায় চলমান শান্তি আলোচনায় ‘সংশোধিত শান্তি প্রস্তাবে’র ওপর কাজ করতে সম্মত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকেরা। একটি শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত করতে সামনের দিনে উভয় পক্ষের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে রোববার দেশ দুইটি জানিয়েছে।

দুই দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনা ‘চূড়ান্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। খবর বিবিসি’র।

এর আগে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় ‘দারুণ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

ইউক্রেনীয় এবং ইউরোপীয় আলোচকদের সাথে বৈঠকের পর রুবিও বলেন, কিন্তু ‘এখনও কিছু কাজ করার বাকি আছে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘এখন এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড) ট্রাম্পের টিম বা দল আমাদের কথা শুনছে।’

ইউক্রেন এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা ফাঁস হওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

একইসাথে ভ্লাদিমির পুতিনের মাধ্যমে সমাধানের একটি 'ভিত্তি' হিসেবেও এ প্রস্তাবগুলোকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এর আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, তার দেশকে ‘একটি খুব কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে পারে, হয় মর্যাদা হারানো অথবা একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হারানোর ঝুঁকিও আসতে পারে।’

রোববার (২৩ নভেম্বর) রাতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় রুবিও জানিয়েছেন, আলোচনাকারী বা সমঝোতাকারী দলগুলোর ‘খুব ভালো একটি দিন’ কেটেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল ২৮ দফা মার্কিন পরিকল্পনার মধ্যে 'উন্মুক্ত বিষয়গুলো’ কে আরো গুছিয়ে বা কমিয়ে নিয়ে আসা এবং এর সাথে যুক্ত সব পক্ষ 'উল্লেখযোগ্য উপায়ে' তা অর্জন করেছে তা নিশ্চিত করা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কূটনৈতিক আরো বলেন, প্রস্তাবনার এই প্যাকেজ রাশিয়ায় পাঠানোর আগে যে কোনো চূড়ান্ত চুক্তিতে ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের রাজী হতে হবে।

এখনও কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

রোববার জারি করা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় দেশই একটি ‘হালনাগাদ এবং পরিমার্জিত শান্তি কাঠামো’ নিয়ে একমত হয়েছে।

তারা ‘আগামী দিনগুলোতে যৌথ প্রস্তাবগুলোর সাথে একনিষ্ঠভাবে কাজ’ করতে সম্মত হয়েছে।

বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির নেতৃত্বে কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে একটি বিকল্প পরিকল্পনা দেখেছে।

তবে বিবিসি নথিটি দেখেনি এবং রুবিও এর অস্তিত্ব সম্পর্কেই অস্বীকার করেছেন।

এর আগে রোববার, রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রচেষ্টার প্রতি ‘একেবারেই কোনও কৃতজ্ঞতা দেখায়নি’ বলে ইউক্রেনের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও উল্লেখ করেন, ইউরোপ - যেখানে কিয়েভের কিছু বলিষ্ঠ মিত্র রয়েছে তারা এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের জন্য অর্থায়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য মস্কো তাদের তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।

জেনেভা আলোচনায় মার্কিন খসড়া প্রস্তাবের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপকভাবে ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এই শান্তি পরিকল্পনায় বর্তমানে ইউক্রেনীয়ান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

দোনেৎস্কের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চল এবং ২০১৪ সালের রাশিয়ার দখল করা দক্ষিণের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে কার্যত নিয়ন্ত্রণ থাকবে রাশিয়ার।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা খেরসন এবং ঝাপোরিজঝিয়ার সীমান্ত বর্তমান যুদ্ধরেখা বরাবর স্থির করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই পরিকল্পনায়।

আংশিকভাবে উভয় অঞ্চলই রাশিয়ার দখলে।

প্রতিবেশী পোল্যান্ডে ইউরোপীয়ান যুদ্ধবিমানগুলো মোতায়েন রাখার কথাও বলা হয়েছে মার্কিন এই পরিকল্পনায়।

একইসাথে মার্কিন এই পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সংখ্যা ছয় লাখে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এখন সেখানে সৈন্য সংখ্যা আট লাখ ৮০ হাজার জন।

এই খসড়াতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ না চাওয়ার অঙ্গীকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।

এর পরিবর্তে কিয়েভ ‘নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ পাবে। তবে এর সম্পর্কে বিস্তারিত কোন কিছু জানানো হয়নি।

এই নথিতে বলা হয়েছে, ‘আশা করা হচ্ছে’ যে রাশিয়া তার প্রতিবেশীদের ওপর হামলা করবে না এবং ন্যাটো আর সম্প্রসারণ করবে না।

এই খসড়ায় আরো প্রস্তাব করা হয়েছে যে, রাশিয়ার ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর জোট জি-সেভেন এ পুনরায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশটিকে ‘বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পুনরায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে।’

অর্থাৎ একে আবার জি-এইট করার প্রস্তাবও রয়েছে মার্কিন পরিকল্পনায়।

বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।

এদিকে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও সম্মুখভাগে থাকা রুশ সৈন্যরা ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

এই শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাবে রাজি হতে ইউক্রেনকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ট্রাম্প।

কিন্তু খসড়া প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেনের মিত্র - ইউরোপ, কানাডা এবং জাপানের মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করার পর মি. ট্রাম্প বলেছেন, এই প্রস্তাব কিয়েভের জন্য দেওয়া তার ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ নয়।

একইসাথে রোববার রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ‘খুব আশাবাদী যে আমরা খুব শীঘ্রই একটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে সেখানে পৌঁছাতে যাচ্ছি, সেটি হোক বৃহস্পতিবার, হোক অন্য দিন অথবা হোক পরের সপ্তাহের সোমবার।’

জেনেভায় আলোচনা শুরু হওয়ার আগে, রুবিও এবং পররাষ্ট্র দফতর ব্যাপকভাবে ফাঁস হওয়া এই পরিকল্পনাটি যুক্তরাষ্ট্রের লেখা কথাটা বলতে বাধ্য হয়েছিল।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের একটি দল দাবি করেছিল যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বলেছেন খসড়াটি রাশিয়ার প্রস্তাব এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানকে প্রতিনিধিত্ব করে না, এমন ঘটনার পরই রুবিও ওই খসড়া নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন।

রুবিও সেই বক্তব্য খণ্ডন করে বলেন, মস্কো এবং কিয়েভের ‘ইনপুট’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই খসড়া প্রস্তাব লিখেছে।

অন্যদিকে, পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র রুবিওর সাথে কথোপকথনের সিনেটরদের বিবরণকে ‘স্পষ্টত একেবারেই মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর