Logo

আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে লক্ষাধিক মানুষ নিহত : জার্মান গবেষণা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে লক্ষাধিক মানুষ নিহত : জার্মান গবেষণা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা দুই বছরের ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। জার্মানির খ্যাতনামা ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চের নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চিত্র। সরকারি পরিসংখ্যানের বাইরে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির চিত্র উঠে এসেছে এ গবেষণায়।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা জাইটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় বাস্তব নিহতের সংখ্যা এতদিন ধারণা করা সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন বা মৃত্যুবরণ করেছেন। গড় হিসেবে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৯।

আনাদোলু জানিয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা এতদিন যা ধারণা করা হচ্ছিল, বাস্তবে তা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে সোমবার (২৪ নভেম্বর) জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা জাইট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী রস্টকের খ্যাতনামা ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চের একদল গবেষকের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে অন্তত এক লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বা নিহত হয়েছে।

গবেষণা প্রকল্পটির কো-লিডার ইরিনা চেন বলেন, ‘সঠিক মৃতের সংখ্যা আমরা কখনোই জানতে পারব না। আমরা শুধু যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত একটি অনুমান করতে চেষ্টা করছি।’

গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে গাজা উপত্যকায় ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বা তারা নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যবর্তী বা গড় অনুমান ১ লাখ ১২ হাজার ৬৯ জন।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের গবেষকরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরিসংখ্যানগত এ চিত্র তৈরি করেছেন। গাজাভিত্তিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের পাশাপাশি তারা একটি স্বাধীন পরিবারভিত্তিক সমীক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংবাদও এ বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এতদিন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যার একমাত্র সরকারি উৎস ছিল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে তারা ৬৭ হাজার ১৭৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। তবে জাইট–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ তথ্য নিয়ে কোনো ধরনের পরিসংখ্যানগত কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উল্টো বিভিন্ন গবেষণা দল আগেই দেখিয়েছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণত রক্ষণশীলভাবে হিসাব করে থাকে। এখন ভালোভাবেই নথিভুক্ত হয়েছে যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন সরকারি সংখ্যার চেয়ে বাস্তবে আরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। বিভিন্ন গবেষণাতেই অপ্রকাশিত মৃত্যুর সংখ্যা যে বেশি, তা বারবার উঠে এসেছে।

এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেবল নিশ্চিত মৃত্যুর তথ্যগুলোই গণনা করে— যেমন হাসপাতাল থেকে ইস্যুকৃত মৃত্যু সনদের ভিত্তিতে। যুদ্ধের কারণে অনেক হাসপাতালে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা স্বজনদের দেওয়া মৃত্যুসংবাদও গ্রহণ করে; পরে একটি প্যানেল সেগুলো যাচাই করে। বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা মারা যায়, তাদের অনেকেই এসব রেকর্ডে ধরা পড়ে না।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের এ গবেষণা দলটি আগের গবেষণার ভিত্তিতে আরও বিস্তারিত মৃত্যুহার বিশ্লেষণ করেছে। তারা নারী ও পুরুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সভিত্তিক হিসাব আলাদাভাবে পরীক্ষা করেছে।

এ পদ্ধতিতে শুধু মোট মৃত্যুর সংখ্যা আরও নির্ভুলভাবে জানা যায় না, বরং কারা মারা গেছে— তা নিয়েও বিস্তারিত চিত্র পাওয়া যায়। লিঙ্গ ও বয়সভেদে মৃত্যুর রেকর্ডের তথ্য পরিবর্তিত হয়; নারীদের মৃত্যু অনেক সময় পুরুষদের তুলনায় কম নথিভুক্ত হয়। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যু প্রায়ই সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়ে যায়।

গবেষকদের হিসাবে, মৃতদের প্রায় ২৭ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং প্রায় ২৪ শতাংশ নারী।

এছাড়া গবেষকরা যুদ্ধের কারণে গাজার জীবনযাত্রার ওপর প্রভাবও হিসাব করেছেন। যুদ্ধের আগে গাজায় নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৭ বছর, পুরুষদের ৭৪ বছর। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী নারীদের জন্য এ সংখ্যা নেমে এসেছে ৪৬ বছরে এবং পুরুষদের জন্য ৩৬ বছরে। এটি আপাতত একটি পরিসংখ্যানগত মান।

এর অর্থ হলো- যদি সাম্প্রতিক বছরের মতো একই মাত্রায় যুদ্ধ চলতে থাকে, তাহলে ফিলিস্তিনিরা গড়ে এ বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারবেন। আর এসব পরিসংখ্যানই দেখাচ্ছে, গাজার সাধারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি কতটা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসরায়েল গাজা শহর ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর