Logo

আন্তর্জাতিক

মেসির সফরে বিশৃঙ্খলার জেরে পদত্যাগ পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রীর

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:১৩

মেসির সফরে বিশৃঙ্খলার জেরে পদত্যাগ পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রীর

ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির ভারতের কলকাতায় সফরে চরম বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পদত্যাগ করেছেন। ছবি : সংগৃহীত

ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির ভারতের কলকাতায় সফরে চরম বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পদত্যাগ করেছেন।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। খবর বিবিসি’র।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্য পুলিশের প্রধানসহ তিন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সরকার। এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরেক প্রশাসনিক কর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সেদিন যে ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল গত চারদিন ধরেই। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ মঙ্গলবার দুপুরে একটি হাতে লেখা চিঠি প্রকাশ করেন সামাজিক মাধ্যমে, যেটিকে অরূপ বিশ্বাসের পদত্যাগ পত্র বলে তিনি দাবি করেছিলেন।

যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে উদ্দেশ্য করে হাতে লেখা ওই চিঠিতে কোনও সই ছিল না।

অরূপ বিশ্বাস ক্রীড়া দপ্তরের সঙ্গেই রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরেরও মন্ত্রী। সেই পদ অবশ্য তিনি ছাড়েননি।

কেন পদত্যাগ মন্ত্রীর?

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক মাধ্যমে একটি চিঠি প্রকাশ করে দাবি করেন যে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে গত শনিবার লিওনেল মেসির সফরে যে চরম বিশৃঙ্খলা হয়েছিল, সেই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।

কুনাল ঘোষ আরও লেখেন যে তিনি সূত্র মারফত জেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেছেন।

বিকেলে মমতা ব্যানার্জীর সই করা একটি চিঠি আসে সংবাদ মাধ্যমের হাতে, যেখানে লেখা হয়েছে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাবনাকে মর্যাদা দিয়ে ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত যতদিন না শেষ হয়, ততদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ক্রীড়া দপ্তরের কাজকর্ম দেখাশোনা করবেন।

সরকারিভাবে অবশ্য এ পদত্যাগ নিয়ে কিছুই বলা হয়নি।

অরূপ বিশ্বাস মমতা ব্যানার্জীর সব থেকে আস্থাভাজন মন্ত্রীদের অন্যতম।

গত শনিবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মেসির অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা হয়। যতক্ষণ মেসি ও তার দুই সতীর্থ ফুটবলার লুইস সুয়ারেজ এবং রদ্রিগো ডি'পলকে ঘিরে রেখেছিলেন একদল তথাকথিত ভিআইপি। এর ফলে হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও দর্শকরা দেখা পাননি মেসির।

ওই ভিড়ের মধ্যে পড়ে মেসির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছিল বলে সেখান থেকে মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যেই তাকে সরিয়ে নিয়ে যান নিরাপত্তা কর্মীরা। এরপরেই ব্যাপক বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। ভাঙচুর চালানো হয় দর্শক গ্যালারি আর মাঠে।

সরকারের পক্ষ থেকে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসই ছিলেন সেদিন মাঠের দায়িত্বে। কেন মন্ত্রী হয়ে তিনি মাঠের বিশৃঙ্খলা সামলাতে পারলেন, না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন প্রশ্ন তুলছিলেন, তেমনই দলের ভেতরেও সমালোচনা হচ্ছিল তার।

মেসির গা ঘেঁষে ছিলেন মন্ত্রী

ক্রীড়ামন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সামলাতে না পারার অভিযোগ যেমন উঠছিল, তেমনই তার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছিল যে লিওনেল মেসিরা যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, ততক্ষণ তার প্রায় গা ঘেঁষেই ছিলেন অরূপ বিশ্বাস।

মাঠে দাঁড়িয়ে মেসির কোমর জড়িয়ে ধরে তোলা একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একই সঙ্গে অরূপ বিশ্বাসের পরিবারের দুজন এবং মমতা ব্যানার্জীর পরিবারের তিনজনকে মেসির সঙ্গে পৃথক একটি ছবিতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় ছবিতেও ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী।

তবে মেসি মাঠ ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই অরূপ বিশ্বাসও মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ততক্ষণে অবশ্য দর্শকাসন থেকে জলের বোতল ছোঁড়া, চেয়ার ভাঙা শুরু হয়ে গিয়েছিল। অরূপ বিশ্বাস যখন মাঠ ছাড়ছেন, তার উদ্দ্যেশ্যেও দর্শকদের কটূক্তি করতে শোনা গেছে একাধিক ভিডিওতে।

তারও পরে ভাঙচুর আরও বাড়ে, দর্শকরা নেমে পড়েন মাঠে।

পুলিশ প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

অরূপ বিশ্বাসের পদত্যাগের চিঠি প্রকাশ্যে আসার আগেই মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় যে ১৩ ডিসেম্বর সল্ট লেকের ‘বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন’, যা সল্ট লেক স্টেডিয়াম নামে পরিচিত, সেখানে বিশৃঙ্খলার জন্য রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক রাজীব কুমারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজীব কুমার মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন অফিসারদের মধ্যে অন্যতম।

রাজীব কুমার ছাড়া আরও কয়েকজন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শনিবারের বিশৃঙ্খলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ।

ওই স্টেডিয়ামটি যে অঞ্চলে অবস্থিত, সেই বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমারকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সরকার।

বিধাননগরের অন্যতম ডেপুটি কমিশনার অনীশ সরকারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিবকে বিশৃঙ্খলার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। স্টেডিয়ামের দায়িত্বে থাকা কার্যনির্বাহী অফিসার দেব কুমার নন্দনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দলও তৈরি করা হয়েছে।

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ভারত পশ্চিমবঙ্গ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর