Logo

আন্তর্জাতিক

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনঃস্থাপন করছে জাপান

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৩

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনঃস্থাপন করছে জাপান

জাপানের নিগাতা অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সেখানে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নতুন করে চালুর সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১১ সালে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর দেশটির পারমাণবিক শক্তিতে ফেরার পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

টোকিও থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান। ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে ফুকুশিমা দাইচি কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বন্ধ ঘোষণা করা ৫৪টি পারমাণবিক চুল্লির একটি এটি। ফুকুশিমা বিপর্যয় ছিল চেরনোবিলের পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা।

আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার চেষ্টা হিসেবে জাপান নতুন করে সচল করার উপযোগী ৩৩টি চুল্লির মধ্যে ১৪টি আবার চালু করেছে।

এদিকে নতুন করে সচল হওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া হবে প্রথম কেন্দ্র, যেটি পরিচালনা করবে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)। প্রতিষ্ঠানটি ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও পরিচালনা করত।

টেপকোর মুখপাত্র মাসাকাতসু তাকাতা বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা আর কখনো যেন না ঘটে এবং নিগাতার বাসিন্দারা যেন এমন কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হন—এ বিষয়ে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমোদন পাওয়া গেলে আগামী ২০ জানুয়ারি ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাতটি চুল্লির মধ্যে প্রথমটি আবারও চালুর কথা বিবেচনা করছে টেপকো। তবে ঠিক কবে এটি চালু হবে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তাকাতা।

অবশ্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নতুন করে চালু করা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগে আছেন।

নিগাতা অঞ্চলের বাসিন্দাদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে টেপকো চলতি বছরের শুরুতে প্রতিশ্রুতি দেয়, আগামী ১০ বছরে তারা প্রদেশটিতে ১০০ বিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার) বিনিয়োগ করবে। কিন্তু অনেক স্থানীয় বাসিন্দার সংশয় এখনো কাটেনি।

গত অক্টোবরে নিগাতা প্রশাসনিক অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ একটি জরিপ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ বাসিন্দা মনে করেন না, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নতুন করে চালুর প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ টেপকোর হাতে কেন্দ্র পরিচালনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

২০১১ সালে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর আশপাশের এলাকা ছেড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নিগাতায় আশ্রয় নেন। তেমনই একজন ৫২ বছর বয়সী আয়াকো ওগা। পারমাণবিক কর্মসূচিবিরোধী এই আন্দোলনকর্মী ও কৃষক এখন তাঁর বাড়ির কাছে নতুন করে তৈরি হওয়া হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।

আয়াকো বলেন, ‘আমরা নিজের চোখে পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি দেখেছি, একে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।’

নিগাতা অঞ্চলের গভর্নর হিদেয়ো হানাজুমি আশা করছেন, ভবিষ্যতে জাপান পারমাণবিক শক্তির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমি এমন একটি যুগ দেখতে চাই, যেখানে আমাদের এমন জ্বালানি উৎসের ওপর নির্ভর করতে হবে না যা উদ্বেগ তৈরি করে।’ যদিও তিনি গত মাসে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে চালুর বিষয়টি সমর্থন করেছেন।

আজ নিগাতার প্রাদেশিক পরিষদে হানাজুমির বিষয়ে আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কার্যত এ ভোটকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে চালুর পক্ষে তাঁর অবস্থানের ওপর একটি গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাপানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, শুধু এই একটি কেন্দ্র চালু হলেই টোকিও অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় ২ শতাংশ বাড়তে পারে।

দুই মাস আগে দায়িত্ব নেওয়া প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করতে ও আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানির উচ্চ ব্যয় মোকাবিলায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে চালুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জাপানের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই এখন আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।

আইএইচ/ 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর