নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী হামলা’ শুরু, জানালেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৫
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট বা আইএস গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হামলা’ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসি’র।
আইএসকে ‘ঘৃণ্য সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, এই গোষ্ঠীটি ‘মূলত নিরীহ খ্রিস্টানদের টার্গেট করে নৃশংসভাবে হত্যা চালাচ্ছে’।
ট্রাম্প বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনী ‘একাধিক নিখুঁত হামলা’ চালিয়েছে।
এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, তিনি ‘নাইজেরিয়ান সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। মেরি ক্রিসমাস!’
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ড জানায়, নাইজেরিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে সোকোতো রাজ্যে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ মাইতামা তুগ্গার আলাদা করে বিবিসিকে বলেন, এটি ছিল একটি ‘যৌথ অভিযান’।
ভবিষ্যতে আরও হামলার সম্ভাবনা নাকচ করেননি তুগ্গার। তিনি বলেন, এটি "নির্ভর করবে দুই দেশের নেতৃত্বের নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর"।
গত নভেম্বরে ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মোকাবিলায় নাইজেরিয়ায় অভিযানের প্রস্তুতি নিতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নেতৃত্বে থাকা অবস্থায়, আমাদের দেশ কখনোই উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে বিকশিত হতে দেবে না’।
নভেম্বরে দেওয়া ওই সতর্কবার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বলছিলেন, তা স্পষ্ট করেননি। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ডানপন্থি মহলে নাইজেরিয়ার খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
সহিংসতা পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন গোষ্ঠী বলছে, নাইজেরিয়ায় মুসলমানদের তুলনায় খ্রিস্টানরা বেশি হত্যার শিকার হচ্ছেন—এমন কোনো প্রমাণ নেই। মোটামুটি সমান সংখ্যক মুসলমান ও খ্রিস্টান দেশটিতে বসবাস করে।
সে সময় নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবুর এক উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ যৌথভাবেই নেওয়া উচিত।
ড্যানিয়েল বোয়ালা জানান, ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় নাইজেরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকে স্বাগত জানাবে, একইসাথে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে দেশটি একটি ‘সার্বভৌম’ রাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, জিহাদিরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে না। বরং তারা সব ধর্মের মানুষ বা ধর্মহীন ব্যক্তিদেরও হত্যা করেছে।
প্রেসিডেন্ট তিনুবু জোর দিয়ে বলেন, দেশটিতে ধর্মীয় সহনশীলতা রয়েছে এবং নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জগুলো ‘সব ধর্ম ও অঞ্চলের’ মানুষকে প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছেন, খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর ওপর ‘অস্তিত্বগত হুমকি’র কারণে তিনি নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
কোনো প্রমাণ ছাড়াই তিনি বলেন, ‘হাজারো’ মানুষ নিহত হয়েছে।
এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এমন এক স্বীকৃতি যার আওতায় ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত’ দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে।
এই ঘোষণার পর তিনুবু বলেন, সব ধর্মের জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্সের মতো জিহাদি গোষ্ঠীগুলো গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তবে বৈশ্বিকভাবে রাজনৈতিক সহিংসতা বিশ্লেষণকারী সংস্থা অ্যাকলেডের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের অধিকাংশই মুসলমান।
নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলেও পানি ও চারণভূমির দখল নিয়ে প্রধানত মুসলিম পশুপালক এবং অনেক খ্রিস্টান কৃষক গোষ্ঠীর মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ ঘটে।
পাল্টাপাল্টি সহিংসতার এই প্রাণঘাতী চক্রে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তবে উভয় পক্ষই নৃশংসতা চালিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, খ্রিস্টানদের বেশি টার্গেট করা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
এদিকে গত সপ্তাহে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে ‘বড় ধরনের হামলা’ চালানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানায়, যুদ্ধবিমান, আক্রমণকারী হেলিকপ্টার ও কামান ব্যবহার করে ‘মধ্য সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ৭০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা’ চালানো হয়েছে। এতে জর্ডানের বিমানও অংশ নিয়েছে।
এমবি

