বৃষ্টিতে প্লাবিত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৪
গাজায় লাখো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এখন তাঁবু ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে শীত, বৃষ্টি আর প্রবল ঠান্ডার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দুই বছর ধরে ইসরাইলি বোমাবর্ষণে উপত্যকার বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আবারও শীতকালীন বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এর মধ্যেই শনিবার গাজা উপত্যকার ওপর দিয়ে তীব্র নিম্নচাপ বয়ে যায়, সঙ্গে ছিল ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়া। চলতি শীতে এটি গাজায় তৃতীয় তীব্র নিম্নচাপ, আর সোমবার থেকে উপত্যকাটিতে চতুর্থ দফা নিম্নচাপ আসার আশঙ্কা রয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পরিবার ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে তাঁবুতেই বাস করছে। মূলত গাজায় ইসরাইলের দীর্ঘ আগ্রাসনের প্রায় পুরোটা সময়ই তারা এভাবে কাটিয়েছে। অঞ্চলটিতে সামনে আরও তীব্র ঠান্ডা, বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, বৃষ্টি বাড়লে তা পূর্ণ মাত্রার ঝড়েও রূপ নিতে পারে।
গাজা সিটির বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসলাহ আলজাজিরাকে বলেন, থাকার মতো অন্য কোথাও তিনি জায়গা পাননি। তার ভাষায়, ‘গাজায় থাকার মতো জায়গা খুঁজে পাইনি, শুধু গাজা পোর্টেই থাকতে পারছি। আমার ঘর এখন ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে। কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই আমরা পুরো ভিজে যাই।’
উত্তরের জাবালিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত দেইর আল-বালাহতে চার সন্তানের মা শাইমা ওয়াদি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা এই তাঁবুতেই আছি। যখনই বৃষ্টি হয়, তাঁবুটা মাথার ওপর ভেঙে পড়ে। তখন আবার কাঠ জুড়ে ঠিক করার চেষ্টা করি। সবকিছুর দাম এত বেড়েছে, আর আয় নেই— শিশুদের জন্য কাপড় বা ঘুমানোর গদি জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছি।’
এই মাসের শুরুতে ভারি বৃষ্টিতে গাজাজুড়ে তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয় প্লাবিত হয়েছে। মূলত গাজার অধিকাংশ ভবনই ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডিসেম্বরেই এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনটি শিশুও রয়েছে। প্রবল ঠান্ডা ও ভেজা আবহাওয়ায় হাইপোথার্মিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়; কিছু ভবনও ধসে পড়েছে। মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, আরও আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ ঢুকতে দিতে হবে।
গাজা পোর্ট এলাকায় সিভিল ডিফেন্সের ফিল্ড অপারেশনের প্রধান ইব্রাহিম আবু আল-রিশ জানান, খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে ভঙ্গুর তাঁবুতে থাকা মানুষ তাদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ‘পানিতে ডুবে যাওয়া অনেক তাঁবু প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।’
গাজা সিটি থেকে আলজাজিরার ইব্রাহিম আল খলিলি জানান, নিরাপদ আশ্রয়বিহীন হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলছে শীতের প্রকোপ।
তার ভাষায়, ‘বৃষ্টি হলেই কাদায় ডুবে যায় মহল্লাগুলো, আর একই দুর্দশা ফিরে আসে বারবার।’
এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শিগগিরই ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনায় বসবেন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। এই যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়েছিল।
তওব শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি ধীরগতির। দ্বিতীয় ধাপের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে— একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন, গাজায় টেকনোক্র্যাটদের অন্তর্বর্তী প্রশাসন, হামাসের প্রস্তাবিত নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর আরও বিস্তৃত প্রত্যাহার।
এ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিটি আংশিকভাবে টিকে আছে। যদিও ইসরাইলের বিরুদ্ধে বহুবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪১৪ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১১৪২ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। একই সময়ে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ৬৭৯ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৯টি লাশ স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আনা হয়েছে। যার মধ্যে ২৫টি ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৭১ হাজার ২৬৬ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৭১ হাজার ২১৯ জন।

