ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এতে মানুষের প্রতিটি আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য রয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলাম শুধু ইবাদত-বন্দেগিই শেখায় না, বরং মানবসেবা, দয়া, সহানুভূতি ও পারস্পরিক সহযোগিতাকেও ইমানের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। অসুস্থ মানুষের খোঁজ নেওয়া, তাদের সান্ত্বনা দেওয়া, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সাহায্য করা—এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ। রোগীদের সেবা- শুশ্রূষা কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি আল্লাহর নিকট নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।
আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন- ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, অথচ তুমি আমার খোঁজ নিতে আসোনি।” সে বলবে, “হে আমার প্রভু! আপনি তো সমস্ত জগতের প্রতিপালক— আমি কিভাবে আপনার খোঁজ নিতে যাই?’
আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার খোঁজ নিতে যাওনি? তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার খোঁজ নিতে যেতে, তাহলে আমাকে তার কাছেই পেতে?’ আল্লাহ তাআলা আবার বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে খাওয়াওনি।’
সে বলবে, ‘হে প্রভু! আপনি তো সমস্ত জগতের প্রতিপালক- আমি কিভাবে আপনাকে খাওয়াই?” আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, অথচ তুমি তাকে খাওয়াওনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তাকে খাওয়াতে, তাহলে তার সেই কাজের প্রতিদান আমার কাছেই পেতে?’
আল্লাহ তাআলা বলবেন: ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানি দাওনি।” সে বলবে, “হে প্রভু! আপনি তো সমস্ত জগতের প্রতিপালক- আমি কিভাবে আপনাকে পানি দিই?” আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, অথচ তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তাকে পানি দিতে, তাহলে তার প্রতিদান আমার কাছেই পেতে?’ (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৫৬৯)
এই হাদীস আমাদের শিক্ষা দেয়- অসুস্থদের খোঁজ নেওয়া, ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো ও তৃষ্ণার্তকে পানি দেওয়া , এগুলো শুধু মানবসেবা নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যদি তার পাশে যেতে, আমাকে পেতে।’ কত গভীর ও হৃদয়স্পর্শী শিক্ষা! আরেকটি হাদীসে আছে, হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি অধিকার রয়েছে।’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘পাঁচটি বিষয় মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের জন্য অবশ্যকরণীয়: (১) সালামের উত্তর দেওয়া, (২) হাঁচি দিলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা, (৩) দাওয়াতে সাড়া দেওয়া, (৪) অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, (৫) জানাযার সঙ্গে উপস্থিত থাকা।’ সহীহ মুসলিম (হাদীস নং ২১৬২), সহীহ বুখারী (হাদীস নং ১২৪০)।
ইসলাম অসুস্থদের সেবা, খোঁজখবর নেওয়া এবং সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সমাজে ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে। একজন মুসলমানের উচিত, রোগীকে দেখে তার কষ্ট অনুভব করা, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া, প্রয়োজনমতো সহযোগিতা করা এবং তার জন্য দোয়া করা। এতে যেমন সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়, তেমনি আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জিত হয়।
লেখক : মুহাদ্দিস ও সিনিয়র শিক্ষক সাতগাঁও মাদ্রাসা, বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আইএইচ/

