Logo

ইসলাম

জাতীয় মিম্বার থেকে

দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ইসকন নিষিদ্ধ করা জরুরি

মুফতি আব্দুল মালেক

ইনজামামুল হক

ইনজামামুল হক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৫

দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ইসকন নিষিদ্ধ করা জরুরি

প্রিয় মুসল্লিগণ! আমরা সবসময় আল্লাহর তাওহিদের শ্লোগান দিব। বাতিল বা জাহিলিয়াতের কোনো স্লোগান দিব না। যে ডাকে আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্মের পরিচয় আছে সেই ডাকে আমরা সাড়া দিব। মনে রাখবেন, পরিচয়ের জন্য নাম। বিভক্তি বা পক্ষপাতিত্বেও জন্য নয়। অন্যায়ভাবে কারও বিপক্ষে যাওয়ার জন্য নয়। কোন ভাষার, কোন গোত্রের বা কোন দেশের বান্দা। তাতে কিছু আসে যায় না। আল্লাহর বান্দা কি না সেটিই লক্ষণীয় বিষয়। রাসুলের শিক্ষার উপর যদি মানুষ থাকে তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা নিরাপত্তা নষ্ট হয় যেসব কারণে সেগুলোর মধ্যে বড় একটা কারণ হলো আসাবিয়্যাত। আসাবিয়্যাত অর্থ হলো- কোনো দল বা গোষ্ঠীর অন্যায়ভাবে পক্ষপাত করা বা অন্যায়ভাবে বিপক্ষে দাঁড়ানো। 

প্রিয় উপস্থিতি! আল্লাহ যেসব জিনিস হারাম করেছেন তার মধ্যে আসাবিয়্যাত কঠিন ও জঘন্যতম হারাম। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আসাবিয়্যাতের দিকে মানুষকে ডাকে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। যে ব্যক্তি আসাবিয়্যাতের ভিত্তিতে লড়াই করতে নামে সেও আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। আসাবিয়্যাতের উপর যার মৃত্যু হয়েছে সেও আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমরা যেই শান্তি ও নিরাপত্তা চাই সেটি দানকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তাই আল্লাহর বিধানের মধ্যে আমাদেরকে শান্তি তালাশ করতে হবে। যাদের সভ্যতা হলো শান্তি নষ্ট করা, নিরাপত্তা নষ্ট করা- তাদের কাছে কখনোই আপনি শান্তি খুঁজে পাবেন না। এজন্য আমাদেরকে রাসূলের সুন্নতের মধ্যে শান্তি তালাশ করতে হবে। তাই যারা অন্যান্য পক্ষপাতিত্বের শ্লোগান প্রচার করে তাদের ঠিকানা একমাত্র জাহান্নাম।

কারও পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়ার ভিত্তি হচ্ছে হক এবং ন্যায়। যে ব্যক্তি হকের উপরে আছে, আমরা তার পক্ষে। আর যে বাতিলের উপর আছে, আমরা তার বিপক্ষে। এটিই আল্লাহর পক্ষ থেকে পক্ষপাতিতত্বের মানদণ্ড। সুতরাং অন্যায়ের পক্ষে যাওয়া এমন এক ব্যাধি যা দেশে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করে। তাই উগ্রবাদীতা, বাড়াবাড়ি বা চরমপন্থার পক্ষে যাওয়াও হারাম। এ সবকিছুরই সেক্যুলার ব্যাখ্যা আছে।

সবচেয়ে বড় জুলুম হলো আল্লাহর হক নষ্ট করা। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম আমরা।

আরেকটি বড় জুলুম হলো শব্দের মর্ম বিকৃত করা। যাকে বলে তথ্য সন্ত্রাস। এটি অনেক বড় জুলুম, সমাজের অনেক বুদ্ধিজীবীরা এই কাজ করে। আমি যেই শব্দগুলো বললাম আপনাদের উগ্রবাদ, চরমপন্থা- এগুলো সেক্যুলার লোকেরা বা পশ্চিমা সভ্যতার অন্ধ ভক্তরা এসব শব্দের আধুনিক ব্যাখ্যা করে; যা ইসলামের যঙ্গে সাংঘর্ষিক। আসাবিয়্যাত শব্দের কাছাকাছি একটি বাংলা অর্থ আছে, কিন্তু আমি সেই শব্দ বলিনি। কারণ, সেটিকেও সেক্যুলাররা বিকৃত করে রেখেছে। আসাবিয়্যাত শব্দের সঠিক অর্থ করা হলে তার মর্ম দাঁড়াবে সাম্প্রদায়িকতা। কিন্তু এই মর্মের মধ্যেও অনেক ধরনের বাতিল মতবাদ ও চিন্তা ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে।

রহমাতুল্লিল আলামীন আমাদের প্রিয় নবি (সা.) সব ধরনের আসাবিয়্যাতকে হারাম ঘোষণা করেছেন। আর ইসলামে গালি দেওয়া বা মন্দ কথা বলাও হারাম। এমনকি যেসব অমুসলিমরা বিভিন্ন দেব দেবির উপসনা করে, যেগুলো ইবাদতের যোগ্য নয়। এরপরও মহান আল্লাহ সেসব বাতিল মা'বুদদেরও গালি দিতে নিষেধ করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সিরাতের মধ্যে আপনি কোনো গালি পাবেন না। কিন্তু যারা অন্যায় পক্ষপাতিত্ব সমাজের মধ্যে ছড়ায় এবং বিভিন্ন শ্লোগান তৈরি করে তাদের ব্যাপারেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন হুঁশিয়ারি দিতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে, সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য যারা জাহেলিয়াতের শ্লোগান দিবে এবং নিজেকে জাহিলিয়্যাতের গৌরবে গৌরবান্বিত করে, তার দ্বারা তার পিতৃ-পুরুষের লজ্জাস্থানকে কর্তন করাও। আর এ কথাগুলো তাকে ইঙ্গিতে নয়; বরং পরিষ্কার ভাষায় বলে দাও। (শারহুস্ সুন্নাহ্: ৩৫৪১) রাসুলের পবিত্র সিরাতে শুধু এই এক জায়গায় এভাবে বলতে শোনা গেছে। শুধুমাত্র এই সমস্ত বেহুদা লোকদের শায়েস্তা করার জন্যই মন্দ কথা বলেছেন তিনি। তাহলে বুঝুন, কতটা ঘৃণ্য কাজ এই উগ্রবাদীতা। সমাজে শান্তি চাইলে এসব উগ্রবাদী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। এটিও একটি উগ্রবাদী সংগঠন, কিন্তু সেটিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। উগ্রবাদী এই সংগঠনের শ্লোগানই তো হলো- মুসলমানদেরকে এই জমিন থেকে বিতাড়িত করো। একেকটা মুসলিম ধর আর জবাই কর। এটি কি শ্লোগান ছিলো না তাদের? অথচ আল্লাহর কাছে একমাত্র হক ধর্ম হলো ইসলাম। তারা মুসলমান হচ্ছে না, তার উপর এসব শ্লোগানও দেয় তারা। অমুসলিম হলেও তোমাকে আল্লাহই রিজিক দিচ্ছেন, নিরাপত্তা দিচ্ছেন। কোথায় এসবের শুকরিয়া আদায় করবে; তা না করে উল্টো মুসলমানদেরকে ধরে ধরে মারার হুমকি দিচ্ছো। চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে সাইফুল ইসলাম নামে এক আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে? কারা করেছে? ইসকন করেছে। কিন্তু তাদের কোনো বিচার হয়নি এখনো। আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। এতে উগ্রবাদীতাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

আর যেই ধর্মের কোনো গোড়া নেই। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসেনাই। যেই ধর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে সেটিই সত্য ধর্ম। যার হাতে সৃষ্টি, জীবন ও মৃত্যু তিনিই তো শরিয়ত দিবেন, ধর্ম দিবেন। আল্লাহর সঙ্গে যেই ধর্মের সম্পর্ক আছে সেটিই হলো সঠিক ধর্ম। আর যেই ধর্মের সম্পর্ক আল্লাহর সঙ্গে নেই সেটিই হলো গোড়া ছাড়া ধর্ম। আর এখন আল্লাহর যমিনে একমাত্র ইসলাম ধর্মের সম্পর্ক আল্লাহর সঙ্গে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম বা দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল হবে না। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫)

আল্লাহ আরও বলেন, 'ইসলাম আল্লাহতাআলা কর্তৃক মনোনীত একমাত্র দ্বীন বা ধর্ম।' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯) আরও ইরশাদ হয়েছে, 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের জ্বিন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বিন মনোনীত করলাম।' (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৩)

ওহীর মাধ্যমে পাওয়া গেছে পবিত্র কোরআন, রাসুলের হাদিস, ওহির মাধ্যমে পাওয়া শরিয়ত যাকে বলা হয় আখেরী শরিয়ত। সব নবি-রাসুলগণ ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিয়েছেন। সর্বশেষ নবী, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁকে আল্লাহ আখেরি শরিয়ত ও কোরআন দান করেছেন। হেদায়েত এবং নাজাত তার অনুসরণের মধ্যে আল্লাহ সীমাবন্ধ করে দিয়েছেন।

সুতরাং, যেই সরকার চাইবে যে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক; তার জন্য প্রথম কাজ হবে ইসকন ও এ জাতীয় উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা। সমাজে স্পষ্টভাবে এরা বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে। সরকার এমনে কতকিছু নিষিদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু সবার আগে যেটা নিষিদ্ধ হওয়া দরকার সে ব্যাপারে কোনো চিন্তাই তারা করছে না। আল্লাহ আমাদেরকেও তাওহিদের উপর অটল রাখুন। সব রকমের বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। যে বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন- অন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব করা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আমীন।

অনুলিখন: মাওলানা কাজী ইনজামামুল হক, সহসম্পাদক, বাংলাদেশের খবর (গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমাপূর্ব বয়ান)

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মিম্বার ইসলাম ধর্ম ইসকন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর