Logo

ইসলাম

স্রষ্টার সৃষ্টির অপার বিস্ময়

Icon

জনি সিদ্দিক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৬

স্রষ্টার সৃষ্টির অপার বিস্ময়

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় সৃষ্টির প্রতিটি দিকই বিস্ময়কর। এই মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রতম কণা থেকে শুরু করে বিশালতম গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত সবকিছুই তার অসীম ক্ষমতা, জ্ঞান এবং নিখুঁত পরিকল্পনার সাক্ষ্য বহন করে। আল্লাহর এই সৃষ্টি নৈপুণ্য কেবল আকারের বিশালতায় নয়, বরং এর গভীর শৃঙ্খলা, বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের রূপায়ণে প্রকাশ পায়। প্রতিটি সৃষ্টিই তার অস্তিত্বের প্রমাণ এবং মানুষের জন্য অফুরন্ত ভাবনার খোরাক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন: 'নিশ্চয় আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' (সুরা আলে ইমরান-১৯০) মহাকাশ যেন মহাশৃঙ্খলার প্রতিচ্ছবি

আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতা বুঝতে গেলে প্রথমে মহাকাশের দিকে তাকাতে হয়। কোটি কোটি গ্যালাক্সি, অসংখ্য সৌরজগৎ এবং গ্রহ-উপগ্রহ এক সুনির্দিষ্ট নিয়মে চলমান। সূর্য নিজের কক্ষপথে ঘোরে, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং চাঁদ পৃথিবীকে। এই বিশাল বস্তুপুঞ্জের মধ্যে এতটুকু বিশৃঙ্খলা নেই। এই নিখুঁত শৃঙ্খলা প্রমাণ করে যে এর নেপথ্যে এক মহাপরিকল্পনাকারী রয়েছেন, যিনি তার সীমাহীন ক্ষমত্য বলে এই মহাজাগতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। আল্লাহ ঘোষণা করেন: 'তিনিই সেই সত্তা যিনি রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন; সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।' (সুরা আম্বিয়া-৩৩)

প্রকৃতির রূপ যেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি

পৃথিবীর বুকে আল্লাহর সৃষ্টি আরও নিবিড় ও মনোরম। পাহাড়ের দুঢ়তা, সমুদ্রের গভীরতা এবং মরুভূমির নিঃসঙ্গতা, সবই তাঁর অনন্য সৃষ্টির অংশ। প্রকৃতিতে বিরাজমান বৈচিত্র্য মানুষকে মুগ্ধ করে। একটি বীজ থেকে বিশাল বৃক্ষের জন্ম হয়, যা ফল দেয় এবং ছায়া প্রদান করে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কেবল চোখকে তৃপ্তি দেয় না, বরং জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন ও খাদ্য সরবরাহ করে। বিভিন্ন রঙের ফুল, বিভিন্ন প্রকারের প্রাণী, নদ-নদীর অবিরাম বয়ে চলা এসবই আল্লাহর সুনিপুণ কারিগরির স্বাক্ষর।

আল্লাহ তাআলা বলেন: 'আর তিনিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তারপর তা দ্বারা আমরা সব রকমের উদ্ভিদের চারা উদগম করি। অতঃপর তা থেকে সবুজ পাতা উদগত করি। যা থেকে আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি। আরও (নির্গত করি) খেজুর গাছের মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি, আংগুরের বাগান, যায়তুন ও আনার। একটার সঙ্গে অন্যটার মিল আছে, আবার নেইও দ্বাক্ষ্য করুন, ওগুলোর ফলের দিকে যখন সেগুলো ফলবান হয় এবং সেগুলো পেকে উঠার পদ্ধতির প্রতি। নিশ্চয় মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য এগুলোর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।' (সুরাতুল আনআম-৯৯)

মানব দেহ ও চিন্তার উৎস

আল্লাহর সৃষ্টির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও বুদ্ধিদীপ্ত অংশ হলো মানুষ। মানুষকে দেওয়া হয়েছে চিড় করার ক্ষমতা, জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ এবং ভালো-মন্দ বিচারের শক্তি। মানুষের শরীরবৃত্তীয় গঠন এক চরম বিস্ময়। আল্লাহ তাআলা বলেন: 'নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে।' (সুরা আত-ত্বীন-৪) অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসির ফাতহুল কাদীরে বলা হয়েছে 'আল্লাহ তাআলা প্রতিটি প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন নিচুমুখী করে। কেবলমাত্র মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলম্বিত দেহ সোজা করে; যে নিজের হাত দিয়ে পানাহার করে। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যথোপযোগী বানিয়েছেন। তাতে পশুর মত বেমানান ও অসামঞ্জস্য নেই। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাঝে উচিত ব্যবধানও রেখেছেন। তাতে বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা, বোঝশক্তি, প্রজ্ঞা, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। যার ফলে মানুষ আসলে তাঁর কুদরতের প্রকাশস্থল এবং তার শক্তিমত্তার প্রতিবিম্ব।'

মানুষকে আল্লাহ শুধু দৈহিক সৌন্দর্যই দেননি, দিয়েছেন আবেগ, বিবেক এবং আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা। এই বোধ ও মনন মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টি থেকে স্বতন্ত্র করেছে এবং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পথও দেখিয়েছে। মানুষকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনড় 'আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য'। (সূরা আয-যারিয়াত-৫৬) অর্থাৎ, সমস্ত সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা, আর এই ইবাদতের জন্য

চিন্তাশীল মানব মস্তিষ্কই শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৃষ্টি রহস্যের জগৎ বিশাল মহাবিশ্ব ও মানবদেহ ছাড়াও আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টি রয়েছে যা খালি চোখে দেখা যায় না। অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া- যা জীবনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ এই ক্ষুদ্র জগতের রহস্য উন্মোচন করছে, আর এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৃষ্টির মধ্যেও যে বিশাল ব্যবস্থাপনা ও জটিলতা লুকিয়ে আছে, তা দেখে আরও বেশি বিস্মিত হচ্ছে। আল্লাহ প্রশ্ন করেন: 'তবে কি তারা উটের দিকে তাকায় না, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আর আকাশের দিকে, কীভাবে তা উত্তোলন করা হয়েছে? আর পাহাড়ের দিকে, কীভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে? আর পৃথিবীর দিকে, কীভাবে তা বিছানো হয়েছে?' (সূরা গাশিয়াহ-১৭ থেকে ২০ আয়াত)

এই আয়াতগুলো ছোট-বড় সব সৃষ্টির মাধ্যমেই তার নিদর্শন দেখতে উৎসাহিত করে। আমরা যদি মহান প্রভুর সৃষ্টিকুল নিয়ে এক মুহূর্তও গবেষণা করি তাহলে এমনিতেই মাথা সিজদাবনত হয়ে যাবে। আল্লাহ তার সৃষ্টিকুল এর মধ্য থেকে বেশ কয়েকটি প্রাণী, কীটপতঙ্গ-এর নামে পবিত্র কুরআন মাজিদে সুরা অবতীর্ণ করেছেন। আমরা সামান্য মশা-মাছি, পিপড়া বা প্রজাপতি সম্পর্কেও যদি ভাবি, তাহলে মুখে অটোমেটিক সুবহানাল্লাহ উচ্চারিত হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আজীম।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টি অপার এবং এর সৌন্দর্য অনির্বচনীয়। কুরআন ও হাদিস আমাদের বারবার এই সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করে। যাতে মানুষ তার ক্ষমতা উপলব্ধি করে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়।

প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে, নিজেদের অস্তিত্বের দিকে তাকিয়ে এবং মহাজাগতিক শৃঙ্খলার দিকে তাকিয়ে মানুষ সহজেই বুঝতে পারে যে, এই সবকিছুই এক মহাপরাক্রমশালী সত্তার ইচ্ছাধীন। স্রষ্টার এই অপার সৃষ্টি শুধু বিস্ময় নয়, বরং মানুষের জন্য জীবনধারণের পথ, জ্ঞানের উৎস এবং আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণার অফুরন্ত ভাণ্ডার। মহান আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো ভুল নেই। আলহামদুলিল্লাহ। তার প্রতিটি সৃষ্টি বিস্ময়কর। (তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট)

লেখক: প্রাবন্ধিক, দক্ষিণ সালনা, গাজীপুর।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর